‘অভিমানিনী’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ মেয়েটা কেঁদেই চলেছে। আমি কখনোই মানুষের কান্না সহ্য করতে পারি না। আর আল্লাহ আমার কাছেই সবাইকে কাঁদতে পাঠায়! কী করবো আমি? কী বলে সান্তনা দেবো? কিছু ভেবে না পেয়ে বললাম, ‘আচ্ছা আচ্ছা.. এখন এসব বাদ দাও, ঘুমাও।”
আমি লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম ও একই ভাবে কাঁদতে থাকলো। অদ্ভুত তো! এই মেয়ে কান্না থামায় কেন? কী হবে কী না হবে তা না ভেবে আমি ওর হাতটা ধরে ওকে কাছে টেনে এনে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছু বললাম না। শুধু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম অনেকক্ষণ ধরে। এটুকু আমি করলাম শুধুমাত্র একজন মানুষ হিসেবে। ও আমাকে ধরলো না। কেমন জড়োসড়ো হয়ে রইলো। একসময় ওর কান্নাটা থেমে গেলো। পুরুষ মানুষকে আল্লাহ দুটো ক্ষমতা অনেক বেশী করে দিয়েছেন। এক নারীকে কাঁদানোর ক্ষমতা আর দুই নারীর কান্না থামানোর ক্ষমতা।
ভূমিকা অভিমানিনী উপন্যাসটি সর্বপ্রথম লিখেছিলাম ২০০৮ সালে। তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। প্রেমাতাল আমার প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস হলেও অভিমানিনী আমার লেখা প্রথম উপন্যাস।
সুন্দর সুন্দর ডায়েরি সংগ্রহ করা ছিল আমার একটি শখ। বাসায় কেউ ডায়েরি উপহার পেলে সেটা অবশ্যই আমি বাজেয়াপ্ত করে নিতাম। লাইব্রেরির দোকানগুলোর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো ডায়েরিতে চোখ পড়লে সেটা কেনার জন্য টাকা জমাতাম। সেইসব সুন্দর সুন্দর ডায়েরিতে আমি কবিতা উপন্যাস লিখতাম। তেমনই একটা ডায়েরিতে লিখেছিলাম “অভিমানিনী”। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে আবার উপন্যাসটিতে। অনেককিছু যোজন-বিয়োজন করে সংশোধন করি।
আশি-নব্বইয়ের দশকের কিছুই পাইনি আমি বা আমার বয়সী আমরা। কিন্তু সেই সময়ের অনেক কিছুই আমাকে খুব টানে। তাই ভেবেছিলাম সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে একটা উপন্যাস লিখবো। সেই ভাবনা থেকেই অভিমানিনী লেখা।
দুই কিশোরী বোন অদ্রি-অর্পি লুকিয়ে তাদের বড় চাচ্চুর ডায়েরি পড়ে। যে ডায়েরিতে লেখা থাকে ১৮-২০ বছর আগে তাদের চাচ্চুর জীবনে ঘটে যাওয়া এক দারুন কাহিনী। এরই প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠেছে অভিমানিনীর মূল কাহিনী।
অধ্যয়নের প্রকাশক তাসনোভা আদিবা সেঁজুতির নিকট আমি কৃতজ্ঞ উপন্যাসটি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ার জন্য।
বইয়ের কিছু অংশ বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতে চলল। ভয়ংকরভাবে ঝড়ো হাওয়া বইছে।
জানালার কপাটগুলো বারি খাচ্ছে বারবার। এবছর বৈশাখ আসার আগেই কালবৈশাখী শুরু হয়ে গিয়েছে। অনন্যা চিৎকার করে বলল, “অদ্রি, অর্পি দৌড় দিয়ে সব ঘরের জানালাগুলো বন্ধ কর।” “যাচ্ছি মা।”
তারপর অনন্যা ছাদে চলে গেল কাপড় আনতে। অদ্রি দাদা-দাদুর ঘরে আর অর্পি লাইব্রেরি ঘরে জানালা বন্ধ করতে গেল। এই লাইব্রেরিটা বানিয়েছে বড় চাচ্চু। সব ধরনের বই আছে এখানে। তিন দিকের দেয়ালে তিনটি বইয়ের আলমারি, আর একটি দেয়ালে ঘরে ঢোকার দরজা আর একটি বড় টেবিল আর দুটি চেয়ার। অর্পি ছাড়া আর কারোরই বই পড়ার নেশা নেই, অদ্রি মাঝে মাঝে পড়ে কিন্তু নেশা নয়। তবে এই ঘরে অর্পির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো তালা দেয়া আলমারিটি। এখানকার ঐ একটি আলমারিই তালা দেয়া। ১৮ বছর হওয়ার আগে অর্পি ঐ বইগুলো পড়ার অনুমতি পাবে না।
লাইব্রেরিতে ঢুকতে গিয়েই দেখল বড় চাচ্চু টেবিলে বসে কিছু লিখছে। চাচ্চ একটু অন্য ধাঁচের মানুষ। বয়স ৪১/৪২-এর মতো হবে। কম কথা বলে, গম্ভীর আর প্রচণ্ড রাগী। নামটাও তেমন, নীরব! কেন যেন সবাই একটু ভয় পায় তাকে। দাদুর মুখে শুনেছে বড় চাচ্চু যেমন চুপচাপ তেমনি রাগলে নাকি মারাত্মক। কিন্তু ব্যাপারটা আজও বোঝাই হয়নি, কারণ ওরা কখনো সেরকম কিছু দেখেনি। চাচ্চু খুব বড় ডাক্তার, বাসায় থাকেই না বলতে গেলে। সকালে বেরিয়ে যায় আর রাতে ফেরে। তো বাসায় থাকলে না রাগারাগি করবে আর ওরা দেখবে।
আজ ছুটির দিন তাই চাচ্চু বাসায়, মাঝে মাঝে অবশ্য ছুটির দিনেও থাকে না। অর্পির বাবা সৌরভও ডাক্তার, তবে এমন রসকষহীন না, বাবা খুব মজার। ভাগ্যিস চাচ্চু ওর বাবা না। তাহলে যে কী হতো! আহারে…..