উনিশ শতকের ষাটের দশক। নীলকর কুঠিয়ালদের অত্যাচার আর নিপীড়নে বাংলার কৃষক সমাজ বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিক। পুড়ে ছাই হয় সাহেবদের নীলকুঠি ও কাছারিবাড়ি । মেহেরপুরে নীলবিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন জমিদার মথুরানাথ। হিন্দু-মুসলমান প্রজাদের নিয়ে গড়ে তোলেন বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী। আমলা সদরপুরের জমিদার প্যারী সুন্দরী নীলকর কেনির বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে জ্বালিয়ে দেন প্রতিরোধেন আগুন। সেই প্রতিরোধ-সংগ্রামের অগ্নি-উত্তাপের আঁচ মেহেরপুরের ভাটপাড়া ও আমঝুপি নীলকুঠির গায়ে লেগেছিল কি? ১৮৬০ সাল পর্যন্ত কেমন ছিল মেহেরপুরের গ্রাম-জনপদ? কেমন ছিল তখনকার বাংলাদেশটা? নবাবি আমল থেকে নদীয়া জেলার শিকারপুর, সাহারবাটী-ভাটপাড়া, আমঝুপি, পিরোজপুর, কাজীপুর, জামসেদপুর, বেতবাড়িয়া, বামন্দী, ভবরপাড়া, বল্লভপুর প্রভৃতি গ্রাম ছিল সচ্ছল ও স্বনির্ভর। কিন্তু নীলকররা আসার পর গ্রামগুলো থেকে সুখ-স্বস্তি উধাও হয়ে যায়। নীল বুনে বুনে সর্বস্বান্ত হয় মেহেরপুর এলাকার চাষিরা। অবাধ্য চাষিদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও ভাটপাড়া, আমঝুপি, কাথুলি নীলকুঠি সংলগ্ন এলাকার চাষিরা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়নি। বল্লভপুর, রতনপুর ও ভবরপাড়া নীলকুঠি এলাকার খ্রিস্টান চাষিরা যখন কুঠি-কাছারিবাড়ি ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়, তখনো নাকি ভাটপাড়া, কাথুলি ও আমঝুপিতে চলেছে নীলের রমরমা কারবার। ভাটপাড়া নীলকুঠি এলাকায় দু-একটি বিক্ষিপ্ত লড়াই ছাড়া তেমন কোনো সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি। কেন ওঠেনি? এর কারণ-ই বা কী হতে পারে? এসব প্রশ্নের জবাব মেলাতে গিয়ে ভিন্নমাত্রিক সুরে রচিত হয় ‘ভাটপাড়া নীলকুঠি ও উনিশ শতকের বাংলাদেশ’।