বিশ্বের প্রবন্ধ সাহিত্যের ইতিহাসে ডেল কার্নেগি এক স্মরণযােগ্য নাম। তার লেখা গ্রন্থাবলী আজও আমরা আগ্রহের সঙ্গে পাঠ করে থাকি। আসলে প্রবন্ধকার হিসাবে তার সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলাে তিনি শুধুমাত্র তাত্ত্বিক আলােচনার মাধ্যমে তাঁর প্রবন্ধাবলী শেষ করেননি। প্রতিটি প্রবন্ধের সাথে ব্যবহারিক জীবনের একাধিক ঘটনা সংযুক্ত করেছেন। তাই এই প্রবন্ধগুলি পড়লে মনে হয়, আমি বুঝি আমার নিজের জীবনের ছবি দেখতে পাচ্ছি। ডেল কার্নেগি রচনার আর একটি বড় বৈশিষ্ট্য, তিনি সবসময় হতাশ মানুষকে আশাদীপ্ত হতে বলেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন ইতিবাচক মনের মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, পারিপার্শ্বিকতার কারণেই মানুষের স্বপ্নগুলি সফল হয় না। এর জন্য তাকে দোষ দিয়ে কোনাে লাভ নেই। তিনি চেষ্টা করতেন, কীভাবে ওই প্রতিবন্ধী পারিপার্শ্বিকতাগুলােকে অপসারণ করা যেতে পারে। তাই আজও তার লেখা আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। সেই সাহিত্যকেই আমরা কালােত্তীর্ণ বলবাে, যা কালের যাত্রাপথে ক্ষয়িষ্ণু হয় না। যা যুগ-যুগান্তরে নিজেকে নতুন করে প্রতিভাত করতে পারে। একথা অস্বীকার করার বিন্দুমাত্র উপায় নেই যে, ডেল কার্নেগি যখন এইসব প্রবন্ধগুলি লিখেছিলেন, তখন পৃথিবীর বাতাবরণ যেমন ছিল, এখন অনেকটাই তার থেকে পালটে গেছে। এখন মানুষ আগের থেকে আরও বেশি যন্ত্রনির্ভর হয়ে উঠেছে, এটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, নারী-পুরুষের পারস্পারিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে চিরন্তন ধ্যানধারণা, সবক্ষেত্রেই ঘটে গেছে নিঃশব্দ বিপ্লব। তবু আজও আমরা চরম কৌতুহলের সঙ্গে ডেল কার্নেগির রচনাবলী পাঠ করে থাকি এবং নতুন করে উদীপ্ত হই। “ডিপ্রেশান, দুশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে মুক্তির উপায়” এই বইটি পাঠ করে পাঠকগণ ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা থেকে মুক্তির এক চমৎকার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাবেন এবং উপকৃত হবেন।