বইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : খিলাফতব্যবস্থা পৃথিবীর ইতিহাসে দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা একমাত্র শাসনব্যবস্থা। প্রায় সাড়ে ১৩ শ বছর এই শাসনব্যবস্থা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছে শান্তি-শৃঙ্খলা ও ইনসাফের সঙ্গে। খিলাফতে রাশিদার পর নেতৃত্বের বাগডোর ছিল বংশপরম্পরায়। সর্বশেষ খিলাফতের নেতৃত্ব দিয়েছে তুর্কি বংশোদ্ভূত উসমানিগণ। ইতিহাসে যাঁরা অটোমান হিসেবে পরিচিত।
এই বইয়ে আলোচিত হয়েছে উসমানি সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন নিয়ে। সেলজুক সাম্রাজ্যের পতনের পর উসমানি সাম্রাজ্যের উত্থান ছিল সর্বব্যাপী। জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, যুদ্ধ এবং সমরবিজ্ঞান—এককথায় মানুষের জাগতিক জীবনের এমন কোনো বিভাগ ছিল না, যেখানে উন্নতির ছোঁয়া তারা পৌঁছে দেয়নি।
উসমানি সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের কনস্টান্টিনোপল বিজয় ছিল এই সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা। তাঁর পরবর্তী একের পর এক শক্তিমান সুলতান এসে এশিয়া, আফ্রিকা আর ইউরোপ জয় করে নিয়েছেন। পৃথিবী থেকে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার দূর করে ইসলামের বিজয়পতাকা উড্ডীন করেছেন।
একসময় এই বিশাল শক্তিধর সাম্রাজ্য ক্রুসেডীয় আক্রমণে জর্জরিত হয়। সুলতানগণ দুর্বল হতে থাকে। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মুসলমানরা পশ্চিমাদের নিকট পরাজিত হতে থাকে। জনগণ ও বুদ্ধিজীবী-শ্রেণি পশ্চিমা সেকুলার চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়। তারপর নানা ষড়যন্ত্রে শত বছরের প্রচেষ্টায় উসমানি শাসনের পতন ঘটানো হয়।
এই বইয়ে আলোচিত হয়েছে কীভাবে উত্থান হয়েছিল উসমানি সাম্রাজ্যের। তারপর কীভাবে খিলাফতের নেতৃত্ব তাঁদের হাতে আসে। কীভাবে এই উসমানি সাম্রাজ্য প্রায় ৭০০ বছর শাসনের পর নেতৃত্ব হারায় এবং সাড়ে ১৩ শ বছর নেতৃত্ব দেওয়া খিলাফতব্যবস্থার পতন হয়। কীভাবে খিলাফতব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে পশ্চিমা সেকুলার গণতন্ত্র মুসলিম উম্মাহর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে আরও নানাবিধ করুণ ষড়যন্ত্রের ইতিহাস এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহ আজ হতাশ, দিকভ্রান্ত। তাদের কোনো অভিভাবক নেই। যে যেভাবে পারছে খাবলে খাচ্ছে। তারপরও বিশ্বব্যাপী উম্মাহ ঘুরে দাঁড়াবার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। মুসলিম তরুণদের উদ্দীপ্ত করতে, আশার আলো জাগাতে লেখক সুসংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন, দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। হৃদয় স্পর্শ করা উত্তপ্ত কথামালা দ্বারা জ্বালিয়েছেন চেতনার মশাল। উল্লেখ করেছেন নবিজির হাদিস—‘নবুওয়াতের আদলে আবারও আসবে খিলাফত।’
সর্বোপরি বইটি উন্মোচিত করবে আমাদের অতীত-ভুল, যার কারণে মুসলিম উম্মাহ আজ লাঞ্ছিত; দেখাবে বিজয়ের পথ, যার মাধ্যমে আবারও আলোকিত হবে পৃথিবী।