“ব্যাকরণের ভয় অকারণ” বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ
ছাত্রপাঠ্য বাংলা ব্যাকরণের সমস্যা বেশ পুরােনাে। শুরু হয়েছিল হয়তাে হ্যালহেডের ব্যাকরণ (১৭৭৮) কিংবা কেরির। ব্যাকরণ (২য় সংস্করণ ১৮০৫) থেকে। ব্যাকরণগুলােতে বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য আমলে না এনেই সংস্কৃত মুগ্ধবােধ। ব্যাকরণের ছাঁচে বাংলা ব্যাকরণকে ঢেলে সাজানাে হয়েছিল। এতে তৈরি হওয়া ছাঁচটি আজতক ছাত্রপাঠ্য ব্যাকরণের মূল ছাচ হিসেবে থেকে গেছে। এরপর রচিত হয়েছে অসংখ্য স্কুলপাঠ্য ব্যাকরণ, কিন্তু বাংলা ব্যাকরণ শেষ পর্যন্ত । ‘ব্যাকরণ-বিভীষিকা হয়েই রয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষার ‘স্বাতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর ভাষা-আলােচনায়। ব্যাকরণ বইগুলােতে তার তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। অধ্যাপক যতীন সরকার ব্যাকরণের প্রচল ছাঁচে কোনাে বৈপ্লবিক বদল ঘটাননি; কিন্তু বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলােকে যথাসম্ভব জায়গা দিয়ে নতুনত্বের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন। কাজটি তিনি করেছেন গল্পচ্ছলে । তাতে তিনটি প্রধান চরিত্রের সাথে সাথে অপ্রধান চরিত্রগুলােকেও চরিত্র-স্বরূপে চেনা যায়। গল্পরস জমে ওঠে। বিশেষ গাল্পিক-ভাষিক মুহূর্ত তৈরি করে নিয়ে তিনি ঢুকেছেন। ব্যাকরণিক সমস্যাগুলােতে। আলােচনা করেছেন সরল। ভাষায়। খেয়াল রেখেছেন, ব্যাকরণের আলােচনার সুক্ষ্মতা যেন ক্ষুন্ন না হয়। পরীক্ষা তাঁর বিবেচনায় ছিল; কিন্তু মূল। লক্ষ্য ছিল প্রশ্ন উত্থাপন করা এবং সমস্যাগুলাে। ভাষাতাত্ত্বিকভাবে বিশ্লেষণ করা। ব্যাকরণের ভয় অকারণ বইটি ছাত্র-ছাত্রী এবং বিশেষত ব্যাকরণের শিক্ষকেরা অনুসরণ করলে, আশা করা যায়, বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে ব্যাকরণ-শিক্ষার সুবাতাস বইবে।