“যাদু শেখের মেয়ের হাতে কেয়ামাল ডাকাত সোনার মোহর দিয়েছে।” এটা এখন গ্রামের সব চেয়ে আলোচিত বিষয়। যাদু শেখ দৈ বেচতে গেলে লোকজন টিটকারী কেটে বলছে,”তোমার আর দৈ বেচার দরকার কী মিয়া? আকবরী মোহর ঢুকেছে ঘরে। কেয়ামাল ডাকাত সকাল-বিকাল তোমার বাড়ি পাত পেড়ে খেয়ে যাচ্ছে, তোমার আর চিন্তা কি! মোহর কয়েকটা ভাঙ্গাও। কোঠাবাড়ি করো। ঘি-রসগোল্লা খাও যে কয়দিন পারো। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যখন লাঠির গুঁতো দেবে,তা সহ্য করার জন্য তো শক্তি দরকার, নাকি?”
একজনের টিটকারী শুনে অন্যরা মজা পায়। তার হেনস্থা হবার দৃশ্য চিন্তা করে আশপাশের চিরচেনা প্রতিবেশীরা যে আনন্দের হাসি হাসে তাতে সবাইকে যাদু শেখের বড় অচেনা মনে হয়।
গোবেচারা যাদু শেখের চেহারা ভয়ে আমসি মেরে যায়। একমাত্র দৈ এর গুনাগুণ ভালো মত বলে হাঁক দিতে পারে। এছাড়া কথার পৃষ্ঠে কথা সে কোনোদিনই বলেনি তেমন। এখনও পারে না। প্রচন্ড ভয় পায় সে। পুলিশের নাম শুনলেও তার ভয়ের চোটে জ্বর চলে আসে। কেয়ামাল ডাকাতের মতো ভয়ংকর মানুষকেও পুলিশ দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায় হাসি মুখে! হাতের লাঠি দিয়ে পেটে গুঁতো দেয়। কেয়ামাল ডাকাত নিজের মুখেই বলে,”পুলিশ হইলো ডাকাতের আজরাইল। তাকে ভয় না করে উপায় আছে?” ভালো লাগে না তার। দৈ এর বাংলা কাঁধে করে বাড়ি ফিরে যায়।
আনুরা ঢেঁকি ঘর থেকে বের হয়ে এসে বলল,”কি হলো তোমার? চলে আসলে যে? দুই পাতিল দৈ না বেচতে পারলে যে টকে যাবে!”
যাদু শেখ জোর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,”আর দৈ।জীবনটাই টকে যাচ্ছে! যেখানেই যাই মানুষ নানান কথা বলে। আজকে জসি ভাইয়ের মুদির দোকানে তো সবাই বলছিল ঐ মোহরের জন্য আমাকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে। পুলিশে একবার ধরলে কি জানে বাঁচবো? জানে না বাঁচতে পারলে আর দৈ বেঁচে কি হবে? জানের জন্যই তো সবকিছু নাকি?”
যাদু শেখের কথা শুনে আনুরা খুব ভয় পেয়ে যায়।