”গণদেবতা ” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা :
কারণ সামান্যই। সামান্য কারণেই গ্রামে একটা বিপর্যয় ঘটিয়া গেল। এখানকার কামার অনিরুদ্ধ কর্মকার ও ছুতার গিরিশ সূত্রধর নদীর ওপারে বাজারে-শহরটায় গিয়া একটা করিয়া দোকান ফাঁদিয়াছে। খুব ভোরে উঠিয়া যায় ফেরে রাত্রি দশটায়; ফলে গ্রামের লোকের অসুবিধার আর শেষ নাই। এবার চাষের সময় কি নাকালটাই যে তাদের হইতে হইয়াছে, সে তাহারাই জানে। লাঙলের ফাল পাঁজানো, গাড়ির হাল বাঁধার জন্য চাষীদের অসুবিধার আর অন্ত ছিল না। গিরিশ ছুতারের বাড়িতে গ্রামের লোকের বাবলা কাঠের গুঁড়ি আজও স্তূপীকৃত হইয়া পড়িয়া আছে সেই গত বৎসরের ফাল্গুন-চৈত্র হইতে; কিন্তু আজও তাহারা নূতন লাঙল পাইল না।
এ ব্যাপার লইয়া অনিরুদ্ধ এবং গিরিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষের সীমা ছিল না । কিন্তু চাষের সময় ইহা লইয়া একটা জটলা করিবার সময় কাহারও হয় নাই, প্রয়োজনের তাগিদে তাহাদিগকে মিষ্ট কথায় তুষ্ট করিয়া কার্যোদ্বার করা হইয়াছে; রাত্রি থাকিতে উঠিয়া অনিরুদ্ধর বাড়ির দরজায় বসিয়া থাকিয়া, তাহাকে আটক করিয়া লোকে আপন আপন কাজ সারিয়া লইয়াছে; জরুরি দরকার থাকিলে, ফাল লইয়া, গাড়ির চাকা ও হাল গড়াইয়া গড়াইয়া সেই শহরের বাজার পর্যন্তও লোকে ছুটিয়াছে। দূরত্ব প্রায় চার মাইল—কিন্তু ময়ূরাক্ষী নদীটাই একা বিশ ক্রোশের সমান। বর্ষার সময় ভরানদীর খেয়াঘাটে পারাপারে দেড় ঘণ্টা কাটিয়া যায়। শুকনার সময়ে যাওয়া-আসায় আট মাইল বালি ঠেলিয়া গাড়ির চাকা গড়াইয়া লইয়া যাওয়া সোজা কথা নয়। একটু ঘুর-পথে নদীর উপর রেলওয়ে ব্রিজ আছে; কিন্তু লাইনের পাশের রাস্তাটা এমন উঁচু ও অল্পপরিসর যে গাড়ির চাকা গড়াইয়া লইয়া যাওয়া প্রায় অসম্ভব।