“অর্ধেক জীবন”বইটির প্রথম ফ্লাপের কিছু কথা:
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম লেখকরূপে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। সাহিত্যের নানা শাখায় তাঁর কীর্তি ও অবদান অপরিমেয় । এই বরেণ্য স্রষ্টা যখন তাঁর নিজের জীবনের কথা লিখতে শুরু করলেন তখন পাঠক মহলে নানা জিজ্ঞাসা ও আলােড়ন উঠেছিল। সাময়িকপত্রে ধারাবাহিক প্রকাশের সময় তিনি লিখেছিলেন, নিজের জীবনকাহিনি আমি লিখতে প্রবৃত্ত হয়েছি কেন?লেখারই বা কী আছে! আত্মজীবনী তাে শুধু মহাপুরুষ বা মহাকবিরাই লেখেন না, অবসরপ্রাপ্ত সেনানি বা ছারপােকাও লেখে।
‘অর্ধেক জীবন নিয়ে তখন বৃহত্তর বাঙালি পাঠকের ভিতর যে কৌতুহল তৈরি হয়েছিল, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। অনেকে ভেবেছিলেন, এক দীর্ঘ ব্যাপ্ত সময়ের প্রেক্ষাপটে নিজের জীবনকাহিনি চিত্রিত করবেন লেখক। কিন্তু আদপে তা হয়নি। ‘অর্ধেক জীবন’-কে পুরােপুরি আত্মজীবনী বলা যায় না, আবার নিবিড় অন্তৰ্জীবনের অনুপুঙ্খ ইতিহাসও নয়। বরং এই দুইয়ের মাঝামাঝি এক আশ্চর্য জীবনগাথা। নিজের জীবনকে যিনি তাঁর বিস্তর কবিতা ও গল্প-উপন্যাসে টুকরাে টুকরাে ব্যবহার করেছেন, তিনিই যেন এক পূর্ব পরিকল্পিত নির্দিষ্ট পরিধিতে ধরতে চেয়েছেন তাঁর বাল্যকাল থেকে ষাটের দশক পর্যন্ত বয়সকে।
পূর্ববাংলার এক অখ্যাত গ্রামে লেখকের জন্ম। আবার বহু বছর পরে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্যাত্রা। জীবনের এই কালসীমা ঠিক যেন একটি বৃত্ত। এই বৃত্তবর্তী জীবনকাহিনি ‘অর্ধেক জীবন’-এর প্রধান উপজীব্য। লেখকের নিজের ভাষায়, ‘চল্লিশ-পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বিপদসঙ্কুল, কঠিন, ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ের মধ্য দিয়ে জীবন টিকিয়ে রাখা, যাকে বলে জীবন সংগ্রাম, সবকিছুই অনিশ্চিত, তারই মধ্যে নানারকম আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভালােবাসা, অনেক স্বপ্ন, সেই বয়সটার কথা লিখতে চেয়েছি।
‘ তিনটি দশক জুড়ে লেখকের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-ভালােবাসা, স্মৃতি-বিস্মৃতি, অনতিঅতীতের ইতিহাস ও সমসাময়িক ঘটনার ইতিবৃত্ত এই রচনাকে অন্যমাত্রায় উত্তীর্ণ করেছে। সব মিলিয়ে ‘অর্ধেক জীবন’ একটি রােমাঞ্চকর, সংগ্রামবহুল, গৌরবময় ও আনন্দ-বেদনায় আকীর্ণ সত্যিকারের জীবনকাহিনি।