জল টলমল নদী
আমার জাদুর শহর তোমার খোলা চুলের বাতাস
সেই বাতাসে জল টলমল নদী, সেথায় চড়ে বেড়ায় ছোট্ট একটা নাও
নাওয়ের ভেতর আস্ত একটা আকাশ
আকাশ জুড়ে আমার বুকের জমিন, সেই জমিনের সঙ্গী হতে চাও?
আমার মোবাইলের নোট বুক থেকে চন্দ্র খুব মনোযোগ দিয়ে এই চার লাইন পড়লো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো, এটা কি? কবিতা?
আমি জানালাম, হ্যা।
চার লাইনের?
তো? চার লাইনের কবিতা হতে পারে না?
চন্দ্র বলল, পারে না তা বলছি না। তবে আরেকটু বড় হতে পারত।
আমি জানতে চাইলাম, আরেকটু বড় হলে কি হত?
না, মানে, মনে হচ্ছিলো আরও পড়ি। আকাঙ্ক্ষা জেগে রইলো।
আমি বললাম, আকাঙ্ক্ষা থাকা ভালো তো, এটা কবির সাফল্য, পাঠকের মাঝে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলেই তো বুঝতে হবে কবি পাঠককে আকৃষ্ট করতে পেরেছে।
স্বদিধ্ন চোখে চন্দ্র জানতে চাইলো, আমি আপনার পাঠক?
হুম তবে এই কবিতার জন্য তুমি একমাত্র পাঠক।
আমরা দাড়িয়ে আছি শিলংয়ের একটি ঝড়নার সামনে। উচু পাহাড় থেকে ঝমঝমিয়ে সাদা স্বচ্ছ পানি পড়ার শব্দ মোহিত করে দিচ্ছে চারপাশ। বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি অংশ এই শিলং। বিধাতা যেন নিজ হাতে অপরূপ সাজে সাজিয়েছে এই এলাকাটি।
আমার শেষ বাক্যে শোনার পরে চন্দ্র কিছুক্ষন কথা বলল না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো উচু পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝড়না ধারার দিকে, তারপর একসময় আমার দিকে তাকাল, শূন্য দৃষ্টি সেখানে। কিছুটা শিতল গলায় সরাসরি জানতে চাইলো, প্রপোশ করছেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না। আমতা আমতা করে বললাম, এটাকে জাস্ট একটা কবিতা হিসেবেই নাও।
পালটা উত্তর এলো, যে কবিতা লেখা হয়েছে শুধু মাত্র একজন পাঠকের জন্য? এটা কি জাস্ট থাকে? আর আমি নিজে কবি না হলেও বলে দিতে পারি এই কবিতার মানে কি।
আমি উত্তর দিলাম না। আসলে আমার কাছে এর উত্তর নেই।
চন্দ্র বলে গেলো, আপনি অবশ্য আমাকে প্রপোশ করতেই পারেন। সে অধিকার আপনি করে নিয়েছেন। নিডি ফ্যামিলির একটি মেয়েকে তুলনামূলক কম যোগ্যতায় চাকুরী দিয়েছেন। প্রয়োজন হলেই অফিস থেকে কতরকম এক্সট্রা ফ্যাসিলিলিস আমাকে দেন। মায়ের অপারেশনের পুরো খরচ বহন করেছেন, আমার ছোট ভাইয়ের চাকুরী দিয়ে দিয়েছেন আপনার রেফারেন্সে। আমার প্রতি আপনার ফেভার বলে শেষ হবে না। তাই আপনি আমার কাছ থেকে এক্সট্রা ফেভার চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। আপনি আমাকে অফিসের প্রজেক্টে মেঘালয়ে নিয়ে এসেছেন, ফাইভ স্টার হোটেলে উঠেছি আমরা। সেখানে বসেই আপনি আমার কাছ থেকে সরাসরি ফেভার চাইতে পারতেন, আমি আমার রুম ছেড়ে আপনার রুমে উঠে পড়তাম। কষ্ট করে শিলং এ নিয়ে এসে ঝরনার পাশে দাড়িয়ে পরিবেশ তৈরি করে আমাকে প্রেমের ফাদে ফেলে দিনশেষে বিছানাতেই তো নিতে চান। দরকার ছিল না, হোটেলেই বলতেন শুয়ে পড়তাম, এত উপকার করেছেন আপনি আমার। আর শুনেছি পিএস রা বসের সাথে হরহামেশাই বিছায় যায়। আপনি চাইলেই আমাকে পাবেন, তবে ভাববেন আবার আমি সস্তা মেয়ে। বিলিভ মি আই এম স্টিল ভার্জিন। বিছানায় গেলেই সেটি টের পাবেন।
চন্দ্রের এ ধরনের কথায় আমি রীতিমত ভড়কে গেলাম, আমি কম্মিণ কালেও ভাবতে পারিনি চন্দ্র এভাবে রিএক্ট করবে। আমি মিনমিনে গলায় বললাম, তুমি যা ভাবছ ব্যাপার তা ঠিক এমন নয়?
তাহলে কেমন? সত্যি করে বলেন তো আপনি আপনার এই নামকরা ফ্যাশন হাউসের কতজন মডেলের সাথে বিছানা শেয়ার করেছেন?
আমার কি হল জানি না, আমার যেন নিয়ন্ত্রন নেই, আমি সত্যিটা বলে ফেললাম, গুনিনি। তবে ৫০ তো হবেই।
চন্দ্রের মুখে তাচ্ছিল্যর হাসি, ফিফটি করে ফেলেছেন দেখছি। চলুন ফেরা যাক, বিকেল হয়ে এলো, যেতে সময় লাগবে, আজ রাত আবার জাগতে হবে আমাদের। জার্নি করে গিয়ে আবার পরিশ্রমও তো করতে হবে। কামনা বাসনার বিষয় হলেও নিশ্চয় যথেষ্ট স্ট্যামিনা লাগে। চলুন ফিরি।
গাড়ি পাহাড়ের সাথে মেশা আকাবাকা পথ বেয়ে ছুঁটে চলেছে। আমি গাড়ি চাল্লাছি। কোন কথা হচ্ছে না, দুজনায়। গাড়ির প্লে স্টেশন থেকে এফএম রেডিও অন করতেই বাংলা একটি গান ভেসে এলো,