সংগীতচর্চা শাস্ত্রে সিদ্ধ কী অসিদ্ধ, এ-নিয়ে মুসলমান সমাজে পক্ষে-বিপক্ষে দীর্ঘকাল ধরে তর্ক-বিতর্ক চলেছে। এর কোনো সুরাহা হয়নি। কিন্তু এই বিরূপ পরিবেশেও সংগীতের চর্চা ও অনুরাগ-প্রকাশ একেবারে বন্ধ হয়নি। কালিক নিয়মে সংগীত সম্পর্কে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে শিথিল হতে থাকে। বিত্তবান ও সম্ভ্রান্ত-শিক্ষিত মুসলমানের গৃহে প্রবেশ করে কলের গান, সেই উনিশ শতকেই। মীর মশাররফ হোসেন এ-বিষয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ক্রমে গান-লেখা, গান-গাওয়ার পর্ব শুরু হয়। উনিশ শতকে বাঙালি মুসলমানের সংগীতচর্চা ও গীতরচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন মুন্সী বেলাএৎ হোসেন বিরচিত পরমার্থ-সঙ্গীতরত্নাকর (১৩০০)। এই গীতগ্রন্থ সম্পর্কে বলা হয় : ‘ইহা জীবের ভবসাগর উত্তীর্ণ উপযোগী বিশুদ্ধ পরমার্থবিষয়ক সুভাবযুক্ত নানাপ্রকার সঙ্গীতে পূর্ণ। জীবের বিরহ, প্রেম, বৈরাগ্য, ভক্তি প্রভৃতি নানাধর্ম্মপন্থার বিশুদ্ধতা ইহাতে প্রকৃষ্টরূপে সন্নিবেশিত হইয়াছে’। ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরী-সংগৃহীত ১২৫ বছরের পুরোনো দুষ্প্রাপ্য এই গীতগ্রন্থটি প্রকাশিত হতে পারলো তাঁরই উদ্যোগে- তাঁরই সম্পাদনায়, দীর্ঘ ভূমিকাসহ।