অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ বাংলা উপন্যাস-জগতে একটি খ্যাতকীর্তি উপন্যাস। কোনো কোনো সমালোচক এই উপন্যাসটিকে ‘নদীর পাঁচালি’ বললেও প্রকৃতপক্ষে এটি নদীভিত্তিক মালোজীবনের মহাকাব্য। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’র পাশে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ মাথা উঁচু করে আছে। লেখকের ঈর্ষণীয় নৈপুণ্যের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্বতন্ত্র মালোজীবনের আখ্যান শুনিয়েছেন অদ্বৈত, ‘তিতাস একটি নদীর নামে।’ উচ্চবর্ণের ষড়যন্ত্র, কতিপয় মালোর বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রাণদায়িনী তিতাসের বুকে চর জাগার ফলে গোকর্ণঘাটের মালোসমাজ নীরক্ত হয়ে পড়ার ইতিহাসকে নির্মিতি দিয়েছেন লেখক এই উপন্যাসে। অদ্বৈত মল্লবর্মণ জন্মেছেন মালোসমাজে। ফলে এই সমাজের ঠিকুজি-বিস্তার-পরিণতি তাঁর জানা। জানার এই অভিজ্ঞতা নিয়েই তিনি উপন্যাসটি লিখতে বসেছেন। ফলে তাঁর মালোসমাজের রূপচিত্র অঙ্কন পাখির চোখে দেখা অভিজ্ঞতায় অঙ্কন নয়। নিরেট খাঁটিত্ব আছে এই জীবনচিত্রে। মানিকের মৃত্যুবছরেই (১৯৫৬) ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ প্রকাশিত হয়। ‘পদ্মানদীর মাঝি’র বিশ বছর পর প্রকাশিত হলেও ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ‘পদ্মানদীর মাঝি’র প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। ‘তিতাস একটি নদীর নামে’র শেষে প্রান্তিক মালোসমাজের বিনষ্টির সমারোহ আছে। কিন্তু সেই বিনষ্টির অন্তস্র্র্র্র্র্রোতে নিয়তই শোনা যায় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আর উত্তরণের আহ্বান।