পাঠ্যপুস্তক কিংবা ব্যক্তিগত পাঠের মধ্য দিয়ে সাধারণ জনপরিসরে ইতিহাসচর্চার ধারা চালু রয়েছে। সে বাস্তবতায় দূর অতীতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গল্প-ঘটনাই ইতিহাস বলে পরিচিত। আবার পাঠচর্চা না থাকলেও নানানভাবেই ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে মানুষ। বলা যায়, ইতিহাস মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশের মতো। যেকোনো জাতির অস্তিত্ব ও পূর্বপরিচয়ের অনিবার্য সূত্র ইতিহাস। ইতিহাসকে উপেক্ষা করা যায়, কিন্তু তা অস্বীকার করা যায় না। . ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে সত্য ও সঠিক বর্ণনার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ইতিহাসের বর্ণনা ফিকশন বা গল্পধর্মী আখ্যানের মতো কাল্পনিক নয়; আবার অকাট্য ও অনিবার্য সত্যের মতো অদ্ব্যর্থ কোনো বিষয়ও নয় ইতিহাস; ফলে ইতিহাসচর্চার জন্য জরুরি—সত্য ও সঠিক পন্থা যাচাই করা, ইতিহাসের মৌলিক ও সামাজিক প্রয়োগ অনুধাবন করা এবং কোনোভাবেই বিভ্রান্তি ও সংশয়ের শিকার না হওয়া। . ইতিহাসবিদ ইসমাইল রেহান এ ব্যাপারে সচেতন ও মনোযোগী; সচেতনতা ও মনোযোগের এ ধারায় অভ্যস্ত করতে চান ইতিহাসের পাঠকদেরকেও। সে কল্পে রচনাকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন ইতিহাসের নানা অসঙ্গতি ও সংশয়ের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত ক’রে; তথ্যের সাথে চিন্তার আর চিন্তার সাথে অভিযোজনের উপযোগিতা নিশ্চিত ক’রে। . প্রায়ই ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় পাঠকের কাছে দ্বিধা ও সংশয়ে পরিকীর্ণ হয়ে ওঠে; একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও যুক্তির ফলে সঠিক ও প্রকৃত বিষয়টি তৈরি করে বিভ্রম; আবার ইতিহাসের নানান বাঁক ও পরিভাষা নিয়েও তর্ক-বিতর্কের সীমা-সরহদ্দ নেই। এসব ক্ষেত্রে একজন পাঠকের করণীয় ও কর্মপদ্ধতি কী? দ্বিধা ও বিভ্রম থেকে উঠে আসার উপায় কী? কী সমাধান ইতিহাসচেতনাকে ভারসাম্যময় করার? . এসব দ্বিধার জাল সরিয়েছেন অধ্যাপক ইসমাইল রেহান; তুলে এনেছেন ইতিহাসচেতনার সার ও সর। ইতিহাসের বিস্তৃত ভুবনে পা মেপে চলবার রাস্তা দেখিয়েছেন এর পথিককে। সে পথপরিক্রমার খতিয়ানের বিবরণ, মানচিত্র বা দিকনির্দেশনা ইতিহাসপাঠের পূর্বকথা বইটি। কিম্বা বলতে পারি, ইতিহাসপাঠের পূর্বকথা ইতিহাস পাঠচর্চার পূর্বকর্তব্যকথা। —যায়েদ মুহাম্মদ