“মুক্তিযুদ্ধের উপেক্ষিত বীর যোদ্ধারা” বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বৃহৎ ও বলবান সেনাদল ছিলেন সম্ভবত আমাদের কৃষক-মজুর শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরাই। সেইসব অখ্যাত, অবহেলিত ও ইতিহাসের পাতায় প্রায়শই অনুল্লেখিত, বীর সেনানীদের কথা আমরা খুব কমই জানি বা জানতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমর্পিত কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মিনার মনসুর সারা বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তৃণমূলের সেই মুক্তিযােদ্ধাদের শনাক্ত করে তাদের জীবনের গল্পকে, তাদের অতুলনীয় বীরত্ব ও বেদনার ইতিহাসকে জনসমক্ষে তুলে এনেছেন। তাদের মুখ থেকে শুনেছেন কখন, কোন প্রেক্ষাপটে, কার ডাকে এবং কেন তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে যােগ দিয়েছেন, এর জন্য কতােটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে কী পেয়েছেন, তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশে আজ তারা কেমন আছেন- এমনিতরাে আরাে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর।
নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী ও অত্যন্ত সময়ােপযােগী একটি গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধের উপেক্ষিত বীর যােদ্ধারা। এই গ্রন্থে মিনার মনসুর যে ১৪৩ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে ১৫ বছরেরও কম বয়সী বালক, একাধিক নারী, বিভিন্ন ধর্ম ও নৃতাত্ত্বিক জাতিগােষ্ঠীর সদস্য- ভিক্ষুক কাঠমিস্ত্রি, রিকশাওয়ালাসহ বিচিত্র জীবিকার মানুষ। এতে প্রতীয়মান হয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল যথার্থই একটি জনযুদ্ধ। পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী কালে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে এইসব সাধারণ শ্রমজীবী মুক্তিযােদ্ধার অসামান্য অবদানকে খাটো করে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কৃতিত্বটুকু ছিনিয়ে নেন আমাদের শহুরে মধ্যবিত্ত তথাকথিত সুশীল সমাজ ও সামরিক-বেসামরিক শাসকশ্রেণির প্রতিনিধিরা। এই পরিশ্রমলব্ধ গবেষণাগ্রন্থটি সম্পাদনা করে মিনার মনসুর আমাদের একটি জাতীয় লজ্জার কিছুটা হলেও অপনােদন করেছেন।