“আমার বন্ধু রাশেদ” বইটির প্রথম দিকের কথাঃ
রাশেদ যেদিন প্রথম স্কুলে এসেছিল সেটা এখনাে আমার স্পষ্ট মনে আছে। মাত্র ক্লাস শুরু হয়েছে, স্যার রােল কল করার জন্যে খাতা খুলছেন ঠিক তখন দেখলাম একটা ছেলে দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। তার বাম হাতে একটা কাগজ- সেটা ভিজে চুবচুবে, সাবধানে সে কাগজটা ধরে রেখে ক্লাসের ভিতরে উঁকি দিতে থাকে। দেখে মনে হয় তার ছাগলের বাচ্চাটাচ্চা কিছু একটা হারিয়ে গেছে সেটা খুঁজে দেখছে ক্লাসের ভিতরে। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কি একটা ভেবে শেষ পর্যন্ত সে ক্লাসে ঢুকে পড়ল। মজিদ স্যার ভুরু কুঁচকে বললেন, এ্যাই, তুই কে রে? কি চাস?
সে কোনাে উত্তর না দিয়ে ভিজে কাগজটা স্যারের টেবিলে রেখে হাতটা প্যান্টে মুছে ফেলল। স্যার একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি এটা?
কাগজ। কাগজ তাে দেখতেই পাচ্ছি। কি কাগজ জানি না। ছেলেটা উদাস মুখে সারা ক্লাসটাকে এক নজর দেখে বলল, অফিস থেকে দিয়েছে।
স্যার ভিজে কাগজটার দিকে চোখ বুলিয়ে বললেন, ভর্তির কাগজ? তুই এই ক্লাসে ভর্তি হবি? ছেলেটা আবার উদাসমুখে বলল, জানি না। জানি না মানে? স্যার ধমক দিয়ে বললেন, কাগজটা ভিজল কেমন করে? নালায় পড়ে গিয়েছিল। নালায়? স্যার ভুরু কুঁচকে হাত সরিয়ে নিলেন। ময়লা নাই স্যার- ধুয়ে এনেছি। ধুয়ে এনেছিস? স্যার চোখ গােল করে ছেলেটার দিকে তাকালেন, খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলেন, নাম কি তাের? লাডু। লাডু?
শুনে আমরা পুরাে ক্লাস হাে হাে করে হেসে উঠলাম। স্যার রাম-ধমক দিয়ে বললেন, চুপ কর। এক্কেবারে চুপ! আমরা চুপ করতেই মজিদ স্যার আবার ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভালাে নাম কি?
ভালাে নাম নাই। ভালাে নাম নাই? তাের নাম শুধু লাড়ু ছেলেটা মাথা নাড়ল।