বাচিক কলার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিল্প আবৃত্তিশিল্প। বাংলা সংস্কৃতির এই শিল্পটির প্রতি দিনে দিনে মানুষের আগ্রহ ও আকর্ষণ বেড়েই চলেছে। পাঠক হিসেবে আমরা কবিতাকে পাই। কিন্তু শ্রোতা হিসেবে যেন কবিতা নানা বর্ণে-বৈভবে বহুতর মাত্রায় মূর্ত হয়ে ওঠে। কবির মনে ও মননে যেভাবে একে একে শব্দের জন্ম হয়, কবিতায় সন্নিবিষ্ট হয়, তা বহুতর ব্যাপ্তি ও ব্যঞ্জনায় রণিত হয় পাঠক শ্রোতার মনে। এখানেই কবির অভিপ্রেত অর্থের সঙ্গে আমাদের সম্যক পরিচয় হয়। আবৃত্তিশিল্পী এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও অনুভবের আলোতে কবিতাকে আবিষ্কার করেন। পাঠক যখন শ্রোতা হিসেবে সেই একই কবিতাকে পান, তখন তার অনির্বচনীয় উপলব্ধিতে সেই কবিতারই ভিন্নতর আস্বাদ পান। তখন আবৃত্তিশিল্পী আর নিছক কবির বার্তাবহমাত্র নন, শ্রোতার কাছে নিজেকেও ব্যক্ত করেন। তাই কবিতা পড়া ও কবিতা শোনা প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ কবিতার উচ্চারিত রূপকে বরাবর তাৎপর্যপূর্ণ মনে করেছেন। টি এস এলিয়টের মতো আরো অনেক মহান কবিই মনে করেছেন কবির স্বকণ্ঠে কবিতা পাঠশোনা যতটা দরকার ঠিক ততটাই দরকার কোনো যথার্থ আবৃত্তিশিল্পীর পাঠ শোনা। এই আবৃত্তির কবিতা সংকলন কবি ও কবিতার পাঠক, আবৃত্তিশিল্পী ও শ্রোতার যথার্থ প্রয়োজন মেটাবে।