এই গ্রন্থভুক্ত লেখকদের প্রত্যেকের লেখা পড়লেই মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে এটাই একমাত্র সত্য। কিন্তু পরের লেখায় গিয়ে সেই ভুল আবার ভাঙে। আবার আমাদের নিমজ্জিত হতে হয় ভিন্ন কোনো বিশ্লেষণে। একটি ভাষণ এভাবে নানামাত্রিকতায় শ্রোতা বা পাঠককে ভাবাতেই থাকে। ভাষণ নিয়ে আমিও ভেবেছি, বলা বাহুল্য। আমার কাছে কখনো মনে হয়েছে এটা কবিতা ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের রাজনৈতিক তাৎপর্যও উহ্য রাখি, যদি এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ভুলে যাই-তবুও কেবল কবিতা হিসেবেই এই ভাষণ একটি চিরকালীন মাত্রা পেতে পারে। এ প্রসঙ্গে লেখক ও বুদ্ধিজীবী আহমদ ছফার একটি উক্তি আরও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন-বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতাঞ্জলি নয়, বলাকা নয়, সোনার তরী নয়। তা হলো ‘আর দাবায়ে রাখবার পারবা না’। মজার ব্যাপার, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কেবল বাঙালি বা এই ভূখণ্ডের বুদ্ধিজীবীদের কাছেই কবিতা মনে হয়নি। ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন নিউজ উইকের প্রচ্ছদ করা হয় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। সেখানেও তারা বঙ্গবন্ধুকে আখ্যা দিয়েছেন ‘পোয়েট অব পলিটিকস’ হিসেবে। সোজা বাংলায় রাজনীতির কবি। আর এই কবির শ্রেষ্ঠ কবিতা নিঃসন্দেহে ৭ মার্চের ভাষণ। এই গ্রন্থে মলাটবন্দি হয়েছে সেই কবিতারই বহুমাত্রিক মূল্যায়ন।