আব্দুল আজিজ খান সাহেব ছিলেন একজন সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনদরদী একজন মানুষ। তার নিজের লেখা আত্মজীবনী থেকে যতটুকু পাঠ শুনলাম এতে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি ছিলেন জীবনযুদ্ধের ময়দানে একজন সংগ্রামী মানুষ। একাধারে তিনি ছিলেন সমাজসেবক জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ মেম্বার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, অন্যদিকে তিনি দীর্ঘদিন সিলেট মহিলা কলেজে চাকরি করেছেন, চাকরি ছেড়ে দিয়ে হয়েছেন ইন্সুরেন্স কর্মকর্তা তারপর প্রতিষ্ঠা করেছেন মাদরাসা। একই সাথে এত বিচিত্র পেশার মানুষ সচরাচর দেখা যায় না। আমি আব্দুল আজিজ খান সাহেবের জীবনী শুনে হতবাক হয়েছি এজন্য যে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁকে অসম্ভব রকমের সংগ্রাম ও সাধনা করতে হয়েছে। দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র আদর্শের কারণে তাঁকে বারবার পেশার পরিবর্তন করতে হয়েছে। তাঁর লেখা থেকে উল্লেখ করছি, ‘আমাকে এক পর্যায়ে Insurance-এর কারবার ছাড়িতে হইল তাও আদর্শিক অবস্থানের কারণে। আমাদের জানা উচিত আদর্শ ছাড়া মানুষ টিকে থাকতে পারে না। আব্দুল আজিজ খান সাহেবের পক্ষে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া সহজ হয়েছে একটা কারণেই, আর তা হলো দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শের পাবন্দ ছিলেন তিনি। মনে রাখতে হবে আদর্শ আপনাকে একটা লক্ষ্যে পৌঁছে দিবেই তাই সবাইকে দুনিয়ার কল্যাণ আর আখেরাতের মুক্তির উদ্দেশে আদর্শকে আন্তরিকভাবে ধারণ করা উচিত।
সাহস ও আদর্শিক চেতনা আব্দুল আজিজ খান সাহেবকে সব সময় কর্মপ্রেরণা যুগিয়েছে। মাদরাসা প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে তাঁর লেখা ভূমিকা আমাকে অতিশয় মুগ্ধ করেছে। আপনার কাছে মনে হতে পারে সব কাজ আপনি করছেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোন এক অদৃশ্য শক্তি আপনাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিচ্ছেন। আর এটাই হচ্ছে বাস্তব সত্য। নিজের ব্যাপারে আমার উপলব্ধি হচ্ছে, আমাকে দিয়ে কেউ যেন কাব্যকর্ম করিয়ে নিচ্ছেন, এক্ষেত্রে আমি উপলক্ষ মাত্র আব্দুল আজিজ খান সাহেবের লেখায় এই বিষয়টা খুবই সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে যার কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হলো- ‘মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ইহা বড়ই দুরূহ কাজ। ঈমানের বলে বলীয়ান না হইলে এরূপ কাজ করা একা সম্ভবপর নহে। তদুপরি আল্লাহ তালার সন্তুষ্টি না থাকিলে এই জাতীয় কাজ করা সম্ভব নহে। কোন Institution প্রতিষ্ঠা করা যাহাতে কোরান ও হাদীসের আলোকে শরীয়তের সুস্পষ্ট শিক্ষা দেওয়া হয় উহা খোদার মেহেরবানী ছাড়া হয় না। আল্লাহর মর্জি ব্যতীত কোন কাজ হয় না। আপনার মনে হইতে পারে ঠিক ওহা আপনিই করিয়াছেন কিন্তু আপনার হাত পা সবই সাক্ষ্য দেয় উহা আপনি করেন নাই। আমাদের বিশ্বাস- কোন অদৃশ্য শক্তি তাহা আপনার দ্বারা করাইয়া দিয়াছে। পৃথিবীর বড় বড় জ্ঞানীদের আল্লাহ নামক সত্তার প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস রহিয়াছে। তাহারা বাস্তবে বুঝিয়াছেন তাহার কাজ অন্য কোন অদৃষ্ট শক্তি দ্বারা করাইয়া দিয়াছেন। আহ! অসম্ভব খাঁটি কথা! খান সাহেব জীবনকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই এ কথাগুলো সহজে বলতে পেরেছেন। এভাবে ভাবতে পারাটা অতি সহজ ব্যাপার নয়। জীবন যুদ্ধের ময়দানে পোড় খাওয়া ব্যক্তিরাই সাধারণত এভাবে ভাবতে পারেন।
আল মাহমুদ