কবি শ্যামল দাষের কবিতা নিখিল মানব ও প্রকৃতি ছাড়িয়ে কখনো অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়েনি। যাপিত জীবনের বোধ, সমাজের নানা বাঁক, অসংগতি, বিচিত্র শব্দানুষঙ্গ, প্রকৃতির শাসন ও ভাষনের খণ্ড চিত্র তাঁর কবিতা-কেন্দ্ৰিক আয়োজনে ও প্রয়োজনে উঠে এসেছে। তাঁর কবিতার অন্তর্দেশ অনেকখানি বদলেছে সময়ের বিভিন্ন পর্বে বলা যায়, ক্রমোত্তরণের চিহ্ন স্পষ্ট। তাঁর প্রতিভার দ্যুতি আছে বলেই তিনি পাঠকের হৃদয় ভূমিতে কবিতার মর্ম সত্যের বীজ বপন করে দিতে পারেন। কোনো বিশেষ ভাবনা-বলয়ে তিনি বন্দি নন।
ক্ষণকালের পরিধি অতিক্রম করে তাঁর চৈতন্যের পাখি রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশে ডানা মেলেছে। লক্ষণীয় ঈ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের কণা তাঁর কবিতার রসায়নে মিশে আছে যা কিনা মুখোশ আঁটা মানুষের দিকে ইঙ্গিত করছে। সংহত আবেগ ও মননের মধু ছাড়া কবিতা হয়ে ওঠে না-কিছু কিছু তরুণ আছেন, যাঁরা গিমিক-এ গা ভাসিয়ে দেন-কবিতা লিখতে তাঁদের “পরিশ্রম নেই, ভাবনা নেই, উদ্দেশ্য নেই বা আদর্শ নেই-আঁতলামি আছে সবকিছু নস্যাৎ করার হিরোশিপ আছে, নিজের সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত গর্ব ও উচ্চ ধারণা আছে। গোষ্ঠী বাজি করে পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ আছে এখন তো ‘কবি’ বানানো হয়।” কবি ও কবিতা যে হয়ে ওঠার বিষয় তা আর আজকাল বিবেচ্য নয়।
এত কখন এজন্য যে কবি শ্যামল দাষ নিভৃতচারী, দ্রোহের আগুন বুকে পুষছেন, তৃতীয় নয়ন খুলে দিয়েছেন– দীর্ঘকাল কবিতার সঙ্গে সংসার পাতার ফলে তাঁর কবিতায় এসেছে বোধ-উপলব্ধির ও অভিজ্ঞতার স্ব-নির্মিত ভুবন। আমি মনে করি, বর্তমান দেশ কালের ভূমিতে দাঁড়িয়ে শ্যামল দাষ আজ বেদনাবিদ্ধ চিরকালের এ বেদনাকে লালন করেই তিনি কবিতার কাছে দায়বদ্ধ, সমাজের কাছে দায়বদ্ধ। অন্যরকম রম ও আনন্দের স্বাদ খুঁজে পাবেন পাঠক কুল তাঁর ‘হ্যাঁ-ঘূর্ণন না ঘূর্ণন’ কা।