মাতা পিতা একসময় ছিলেন নিজের ঘর-পরিবারের নির্মাতা, সংসার-সমাজের প্রতিষ্ঠাতা। অথচ কালের বিবর্তনে কিছু সংখ্যক হয়েছেন অকর্মণ্য, নিজের ঘরে পরগাছা, সন্তানের চক্ষুশূল এবং পরিবার ও সমাজের বোঝাস্বরূপ। অথই জলে ভাসমান কচুরিপানার মতো দুর্বিষহ অবস্থা বহে চলে তাদের উপর দিয়ে। শেষ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের হাতে গড়া পরিবার বা সংসারে হয়ে পড়েন এক প্রকার বন্দি কিংবা অপাংক্তেও।
অথচ মাঠে-ময়দানে খুব জোরেসোরে শোনা যায় যে, ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’। কিন্তু এই কথা কেউ স্পষ্ট করে কিংবা জোর দিয়ে বলে না যে, ‘আজকের প্রতিষ্ঠা কেবল গতকালের কষ্টের ফসল’। অর্থাৎ গতকাল যারা কষ্টেসৃষ্টে দিন-রাত পরিশ্রম করে সমাজকে ‘আজ’কে পৌঁছে দিয়েছে, তারা হলেন পিতা মাতা। আজকের সমাজের বৃদ্ধ মানুষেরা। আজকের এই বৃদ্ধরাই একসময় ছিলেন সমাজের ভবিষ্যৎ ও কর্ণধার। বৃদ্ধগণের প্রতিপালনের ক্ষেত্রে ছেলে-সন্তানদের ঘর- সংসারে লেগে থাকে ভুল বোঝাবুঝি ও ঝগড়া-বিবাদ । অনেক ছেলের বউ তার শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রহণ করতে পারে না নিজের মা-বাপের মতো।
উপরন্তু তারা বৃদ্ধ পিতা মাতার পরিচর্যাকে আরেকটি বাড়তি ঝামেলা মনে করে ।
আজকাল অধিকাংশ বৃদ্ধ পিতা মাতা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার- যেটা ধ্রুবতারার মতো সত্য ।
কোনো কোনো পরিবারে বৃদ্ধ মানুষের জন্য দিন-রজনির সিংহভাগ সময় ব্যয় করতে হয়, যার পুরোটাই পণ্ডশ্রমতুল্য ।
ফলে ইসলামি শরীয়ত, বিধি-বিধান, হালাল-হারাম ইত্যাদির তোয়াক্কা না করেও আষাঢ়ের কদম ফুলের মতো দিকে দিকে গড়ে উঠছে বৃদ্ধাশ্রম। এ সকল বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করছেন সমাজের অসংখ্য বৃদ্ধ মানুষ। অনেক বৃদ্ধ পিতা মাতা ছেলে-সন্তান থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা হতে বাধ্য। ওইসব সভ্যতার কোনো কিছু না হলেও সমাজের রুঢ় বাস্তবতা।