ব্রিটিশদের সহযোগিতা করার জন্য সামান্য ইংরেজি ও বিজ্ঞান জানা লোকের প্রয়োজন পড়ে। সেই চাহিদাকে সামনে রেখে সীমিত পরিসরে ইংরেজি শিক্ষার বন্দোবস্ত করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেখানে ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি দেয়া হত প্রাথমিক স্তরের গণিত ও বিজ্ঞানের পাঠ। এই সামান্য আলো ভারতবাসীর চোখে নতুন শিহরণ জাগায়। তারা অন্যচোখে নিজের সমাজকে দেখতে পায়। বুঝতে পারে, রোগে-শোকে-জরায় স্থবির এই জনপদের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে অন্ধবিশ^াস। এই বিশ^াসই তাকে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের গহ্বরে। এই বোধটা যতটা না বিজ্ঞানসেবীদের মধ্যে তীব্র হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি হয়েছিল সমাজ সংস্কারকদের মধ্যে। তাঁরা বুঝেছিলেন এই অচলায়তন ভাঙার মন্ত্র পশ্চিমের বিজ্ঞানের বইয়ে লেখা আছে। বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো যুগস্রষ্টাদের সঙ্গে সেকালের বিজ্ঞানসেবীদের হৃদ্যতা তার প্রমাণ। এ ক্ষণজন্মারা শিল্প-সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখলেও বিজ্ঞানের প্রতি তাঁদের আগ্রহের কমতি ছিল না। তাঁরা বিজ্ঞানকে সমাজ পরিবর্তনের প্রভাবক হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
এটা অবশ্য তাঁদেরও আগে বুঝতে পেরেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। তাই তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষাকে আবশ্যক করেছিলেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার যে ধারার সূচনা হয়েছিল, তার গত দুইশ বছরের পথপরিক্রমার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ মিলবে এই বইয়ে। ২৮টি প্রবন্ধের মাধ্যমে পথযাত্রার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।