বর্তমান গ্রন্থটি বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মুনতাসীর। মামুনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রক্ষার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম ও উদ্যোগ পর্যালােচনা করে রচিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাঁর মৌলিক। গবেষণা ও সম্পাদিত ৭০টির বেশি গ্রন্থ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রন্থমালায় ১৫০টির মতাে বই সম্পাদনা করেছেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পাঁচ হাজারের বেশি গ্রন্থ বের হলেও গবেষণা গ্রন্থ খুব নগণ্য। অথচ মুনতাসীর মামুন একাই এত বিপুল সংখ্যা গবেষণা গ্রন্থ। রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। তাই বর্তমান গ্রন্থে। মুনতাসীর মামুনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থের পর্যালােচনা করা হলেও তাকে এক অর্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালােচনাই বলা যায় ।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা বিষয়বস্তু, পরিধি ও পদ্ধতি কী হওয়া উচিত তা মুনতাসীর মামুন দেখিয়েছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রায় প্রতিটি বিভাগ নিয়েই গবেষণা করেছেন এবং তা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রচলিত গবেষণাগুলাের ত্রুটি ধরে নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সামরিকায়ণের বিপক্ষে জনযুদ্ধকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং বিজয়ের ইতিহাসের। পাশাপাশি গ্লানি ইতিহাস চর্চা হওয়ার প্রয়ােজনীয়তা তিনি তুলে ধরেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থ ও অন্যান্য কার্যাবলি এইসব তত্ত্বের পক্ষে কথা বলে। মুনতাসীর মামুনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থের বিভাজনগুলো মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, মুক্তিযুদ্ধের সামরিকায়ণ বনাম জনযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য ও সংস্কৃতির অবদান, গণহত্যা-নির্যাতন, মুক্তিযুদ্ধের বিরােধী পক্ষ : পূর্ব পাকিস্তানি, মুক্তিযুদ্ধের বিরােধী পক্ষ : পশ্চিম। পাকিস্তানি, মুক্তিযুদ্ধ কোষ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার উপকরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য গ্রন্থ প্রভৃতি থেকে বােঝা যায়। তাঁর গবেষণার ব্যাপ্তি । মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত রাখতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমাজে জাগরূক রাখতে মুনতাসীর মামুন সদাজাগ্রত, বাঙালির চেতনাজাগরী সত্তা। তাইতাে তিনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত রাখার আন্দোলনে সবসময় থেকেছেন অগ্রভাগে । তিনি মানবতাবিরােধী অপরাধীদের বিচারের জন্য শুধু আন্দোলন নয়, তাদের বিচারের জন্য সাক্ষ্যও দিয়েছেন। লেখনির মধ্যে দিয়ে তিনি ৩টি নতুন। জেনারেশনকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের দিকে নিয়ে আসার। জন্য কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে পৌছে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। এটাই রাষ্ট্র ও প্রজন্মে উত্তরাধিকার।