প্রাচীন গ্রিক নাট্যকারেরা ‘সময়ের ঐক্য’ নামে একটা রীতি মানতেন। প্রধান কুশীলবের জীবন কাহিনি এমনভাবে আঁকতেন, যেন তিন ঘণ্টার মধ্যে তা অলৌকিক মনে না হয়; যেন মানুষের জীবনের সব সময়টুকু জীবন নয়, কেবল ওই তিন ঘণ্টা সময়ই জীবনের প্রতিবিম্ব।
লেখক সত্যজিৎ রায় মজুমদার তাঁর সময়ের প্রতিবিম্বিত নির্যাসটুকু গ্রিক নাট্যকারের কুশলতায় দরদের সাথে তুলে দিয়েছেন পাঠকের জন্য। মানুষের জীবনকালটা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়। তাই একই সময়ে অস্তিত্বশীল সম্পর্কের সুতোয় বাঁধা অগণিত মানব-মানবীর বেঁচে থাকার ব্যষ্টি বৈচিত্রে ঋদ্ধ এক সম্মোহনী সময়কে যেন শিল্পীর কুশলতায় তুলে এনেছেন। কবি হুইটম্যানের কথার ঋণ স্বীকার করে বলা যেতে পারে এখানে রয়েছে ‘ঐশী প্রচুর্য’Ñ ছাত্রজীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রিয় বন্ধুর অকাল মৃত্যুর মর্মস্পর্শী বেদনা থেকে শুরু করে ভাটিবাংলার নদী এবং নদীর মৃত্যু। শৈশবের শিক্ষা এবং পাঠশালার চিত্র, পরিবারের ঘনিষ্ঠ পরিসরে নিজের মা, গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক উদ্যাপনে মানবীয় মর্মীতার স্পর্শ, গতানুগতিক শিশু-অবান্ধব শিক্ষা পরিবেশের যূপকাষ্ঠে বলি হওয়া অগণিত হতভাগ্য সম্ভাবনার মৃত্যু এবং আরও আরও ব্যক্তিগত ও সর্বজনীন ঘটনাপ্রবাহ ঘনিষ্ঠ দৃষ্টিতে গভীর মমতায় অবলোকন করেছেন প্রতিটি লেখায়। তাঁর সময়কে বোঝার জন্য এ গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধ এক সৃজনী সম্ভাবনার স্মারক হয়ে পাঠকের মননে সুদূরপ্রসারী ছাপ রেখে যাবে, এই প্রত্যাশা।