ষাটের দশকে শুরু হয় সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন। তখন সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা বিভাগে বড় ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশের বামপন্থী শক্তি, বিশেষ করে ছাত্র-যুবসমাজ। একুশে ফেব্রুয়ারি তাদের মনোজগতে সৃষ্টি করেছিল এক অনন্য অনুপ্রেরণা। এর ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন প্রকাশ করেছিল সেরা সব সংকলন—প্রতিধ্বনি, বিক্ষোভ, ঝড়ের খেয়া, সূর্য জ্বালা, অরণি ও নিনাদ। এ ছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারি অবলম্বনে শিল্পীদের আঁকা ড্রয়িং নিয়ে বের করেছিল আরেকটি সংকলন— একুশে স্মরণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের উদ্যোগে বেরিয়েছিল দিনের রৌদ্রে আবৃত বেদনা ও বজ্রে বাজে বাঁশী এবং সেরা সব কবির কবিতার পাশে একজন সেরা শিল্পীর আঁকা ড্রয়িং নিয়ে তারা প্রকাশ করেছিল। একুশে স্মরণে নামের আরেকটি সংকলন। প্রতিটি সংকলনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিলেন মতিউর রহমানসহ আরও অনেকে। সারা রাত ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা মেশিন ও ছাপাখানার বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে একুশের প্রভাতে সংকলনগুলো শহীদ মিনার ও বাংলা একাডেমিতে বিলি ও বিক্রির ব্যবস্থা করতেন তাঁরা। রাজনীতির পাশাপাশি কবিতা, সংগীত, চিত্রকলা প্রভৃতি বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলেন একটি বড় যৌথ মঞ্চ গড়ে দেওয়ার। এসব কাজে তাঁরা পাশে পেয়েছিলেন খ্যাতিমান ও প্রতিশ্রুতিশীল কবি-লেখক ও শিল্পীদের। ১৯৬৪ থেকে ‘৭০ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত সেই সংকলনগুচ্ছকে এক মলাটে আনার প্রচেষ্টা বিদ্রোহী বর্ণমালা। এ বই সেই উত্তাল সময়ের এক মহামূল্যবান দলিল।