বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় রচিত উপন্যাসের অন্যতম সেরা একটি, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’। গল্পের প্রধান চরিত্র হাজারী ঠাকুর চাকরির উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে, এবং চাকরী নেয় বেঁচু চক্রবর্তীর হোটেলে। সেখানে হাজারী ছাড়াও ছিল আর একজন ঠাকুর, বংশী, পদ্ম ঝি ও আরো তিন চার জন চাকর। হোটেলটি খানিকটা এরকম, ঢুকতেই বাম হাতে গদির ঘর, তারপর খাবার ঘর। সেখানে আছে তিন ধরনের মিলের ব্যবস্থা। ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ও থার্ড ক্লাস। গদিতে টিকিট কেটে খাবার ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা। খাবার ঘরের ঠিক পেছনে রান্নার জায়গা, যা ছিল হাজারী ঠাকুরের জন্য স্বর্গ সমান। রান্নার গুনে তিনি ছিলেন লোক মুখে প্রসিদ্ধ। তার নিরামিষ তরকারি ও মাংস রান্নার নাম ছড়িয়ে পড়ে দূর দুরান্তে। সকলের কাছে প্রশংসা জুটলেও পদ্ম ঝি, ও চক্রবর্তী বাবু মুখ ফুটে কক্ষনো সে কথা বলেনি। গত সাত বছর হাজারী মাত্র ৮ টাকার চাকরি করে স্ত্রী ও কন্যার অন্ন জোগাড় করে চলেছে। হোটেলের কিছু দূরেই কুসুমের শ্বশুর বাড়ি। স্বামী তার গত হলেও শাশুড়ির কাছেই দুই সন্তান নিয়ে সে দুধ দই বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালায়। হাজারী ঠাকুরের ভারী মায়া পরে যায় কুসুমের উপর। তিনি কুসুম কে নিজের মেয়ে টেপির থেকে কিছু মাত্র আলাদা করতে পারেন না। হোটেলে কখন কোন ভালোমন্দ রান্না হলেই, পদ্ম ঝির হাজার মুখ ঝামটা শুনেও নিজের ভাগ টুকু কুসুমের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তারপর সন্তুষ্ট হতেন। পিতৃহারা কুসুমও জেঠামোশাই এর আদর যত্ন, মমতা বিশ্বাস, ভরসা, কোন ক্ষেত্রেই কোন অভাব রাখেনি।