বাঙলার কাব্য (১৯৪২) হুমায়ুন কবির (১৯০৬-১৯৬৯) রচিত সাহিত্যের সমাজতত্ত্ব বিচারমূলক প্রথম গ্রন্থ। শুধু বাংলা ভাষাভাষী পরিমণ্ডলে নয় বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও তিনি এই বিষয়ের পথিকৃৎ। ট্রাভেলিয়ান রচিত এই ধরনের প্রথম ইংরেজি গ্রন্থ ইংলিশ সোশ্যাল হিস্ট্রি প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে। হুমায়ুন কবির বাঙলার কাব্য গ্রন্থে কবিতা সৃষ্টির ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটসহ রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতকেও ব্যাখ্যা করেছেন। তুলে ধরেছেন বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য এবং সাহিত্যে তার রূপায়ণের ইতিবৃত্তকে। আর্যপূর্ব বাংলা থেকে শুরু করে বাংলার বৌদ্ধ বিপ্লব, ব্রাহ্মণ্যবাদের পুনরুত্থান, মুসলিম শাসন ও ব্রিটিশ শাসনের সার্বিক সমাজতাত্ত্বিক পূর্বাপরকে ব্যাখ্যা করেছেন বাংলা কবিতার ধারাবাহিকতাকে পর্যালোচনার প্রসঙ্গ ধরে। তাঁর মতে বৌদ্ধবিপ্লবেরই অনিবার্য ফল চর্যাপদ। হুমায়ুন কবির বাংলা কবিতার সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাকে উপস্থাপন প্রসঙ্গে ভারতীয় সভ্যতা বিকাশের গতিধারাকেও চিহ্নিত করেছেন। তুলে ধরেছেন পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গে উৎসারিত ও বিকশিত কাব্য ধারার স্বাতন্ত্র্যকে। তাঁর মতে আধুনি বাংলা সাহিত্য সম্পূর্ণভাবেই শিক্ষিত হিন্দুমধ্যবিত্তের অবদান। কবিরের সকল অভিমতের সাথে পাঠক হয়তো একমত হবেন না। কিন্তু তাঁর পর্যবেক্ষণ পাঠককে নতুন চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করবে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।