নদী ও নারী হুমায়ুন কবিরের একমাত্র উপন্যাস। উপন্যাসটি প্রথম তিনি রচনা করেন ইংরেজিতে Men and Rivers নামে। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে। এর সাত বছর পর প্রকাশিত হয় বাংলা উপন্যাসটি। ১৯৫২ সালে। নদী ও নারী একসময়ের পূর্ববঙ্গ বর্তমান বাংলাদেশের পদ্মাবিধৌত ফরিদপুর অঞ্চলের ভূমিহীন কৃষিশ্রমজীবী বাঙালি মুসলমানের জীবনচিত্র। বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমানের সমাজইতিহাসে উপন্যাসটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই উপন্যাসে আমরা দেখি নদী ও নারী জীবনকে কতটা গভীরভাবে আলোড়িত করে। রহিম, নজুমিয়া, আসগর মিয়া, আমিনা, আয়েষা, কুলসুম, গোলাপি, মালেক, নুরু প্রমুখ চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক বাঙালি মুসলমানের সমাজ, সংস্কৃতি ও জীবনের ভেতর-বাহিরকে চমৎকার নৈপুণ্যে তুলে ধরেছেন। মানুষের জীবন যে শেষপর্যন্ত সার্বক্ষণিক যুদ্ধেরই জীবন এই সত্যই পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষের মধ্য দিয়ে লেখক রূপায়িত করেছেন। উপন্যাসটিতে আমরা দেখি নজুমিয়ারা প্রথম রহিমপুরে, তারপর রহিমপুর পদ্মাগর্ভে বিলীন হলে তারা বিয়ান চরে আবাস স্থাপন করে। কিন্তু প্রকৃতি বা জীবনের কাছে হার মানে না। হার না মানা মানুষদেরই গল্প নদী ও নারী। এখানে পুরুষ চরিত্রেরা যেমন প্রাণবান, তেমনি জীবন্ত নারী চরিত্রগুলোও। উপন্যাসে দেখা যায় প্রধান দুই চরিত্র নজুমিয়া ও আসগর মিয়ার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে পদ্মানদী ও আমিনা। নজু ও আসগর এখানে পদ্মাতীরবর্তী সকল মানুষের জীবনধারার প্রতিনিধি। আর আমিনা শাশ^ত সেই নারী যাকে ছাড়া জীবন নীরস মরুময় অর্থহীন। নজুমিয়া ও মালেকের শূন্য হৃদয়ের হাহাকার তারই প্রমাণ। বেগম আকতার কামাল যথার্থই বলেছেন, “নদী ও নারী আজ ক্লাসিক পর্যায়ে উপনীত।”