বইখানির নাম “গড্ডলিকা প্রবাহ”। ভয় ছিল পাছে নামের সঙ্গে বইয়ের আত্মপরিচয়ের মিল থাকে, কেননা সাহিত্যে গড্ডলিকা প্রবাহের অন্ত নাই। কিন্তু সহসা ইহার অসামান্যতা দেখিয়া চমক লাগিল। চমক লাগিবার হেতু এই যে, এমন একখানি বই হাতে আসিলে মনে হয় লেখকের সঙ্গে দীর্ঘকালের পরিচয় থাকা উচিত ছিল। সকালে হঠাৎ ঘুম ভাঙিয়া যদি দ্বারের কাছে দেখি একটা উইয়ের ঢিবি আশ্চর্য ঠেকে না, কিন্তু যদি দেখি মস্ত একটা বটগাছ তবে সেটাকে কি ঠাহরাইব ভাবিয়া উঠা যায় না। লেখক পরশুরাম ছদ্মনামের পিছনে গা ঢাকা দিয়াছেন। ভাবিয়া দেখিলাম, চেনা লোক বলিয়া মনে হইল না, কেননা লেখাটার উপর কোনো চেনা হাতের ছাপ পড়ে নাই। নূতন মানুষ বটে সন্দেহ নাই কিন্তু পাকা হাত। … … … লেখার দিক হইতে বইখানি আমার কাছে বিস্ময়কর, ইহাতে আরো বিস্ময়ের ধতর্ব আছে, সে যতীন্দ্রকুমার সেনের চিত্র। লেখনীর সঙ্গে তুলিকার কী চমৎকার জোড় মিলিয়াছে, লেখার ধারা রেখার ধারা সমান তালে চলে, কেহ কাহারো চেয়ে খাটো নহে। চরিত্রগুলো ডাইনে বামে এমন করিয়া ধরা পড়িয়াছে যে, তাহাদের আর পালাইবার ফাঁক নাই। –রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর