‘যেভাবে কবিতাকে দেখেছি-তিন যাপনে’ শিরোনামের গদ্যটিতে বঙ্গ রাখাল কবিতার সৌন্দর্যকে হৃদয়ে জড়িয়ে পুষ্পিত সুন্দরের বর্ণনার মাধ্যমে কবিতার দশদিকবিহারী দিকটিকে স্পষ্ট করেছেন। কবিতা বিষয়ক আরো একটি গদ্য ‘কবিতার মরণঘাতী অসুখ’- এ তিনি কবিতা প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত মনোবেদনার রূপ উন্মোচন করেছেন। বইয়ে কবিতা বিষয়ক ব্যক্তিগত উপলব্ধির দুটো গদ্যের পর তিনি সরে এসেছেন সাম্প্রতিক সময়ের কবিতার রূপ উন্মোচনে। ‘মুরশিদ গুণমণি গো লোহারে বানাইলা কাঞ্চা সোনা’ শিরোনামের গদ্যে বদরুজ্জামান আলমগীর, একজন জ্বলন্ত অশ্বারোহী শিরোনামের গদ্যে লুৎফর চৌধুরী, মগ্নবাস্তবতার স্বপ্নচারী কবি শিরোনামের গদ্যে জাহিদ সোহাগ এবং মৃত্যুর শিথানে ধু ধু বালিচর শিরোনামের গদ্যে চঞ্চল নাঈমের কবিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। উল্লেখিত কবিদের মাঝে চঞ্চল নাঈম ছাড়া অন্যরা বঙ্গ রাখালের অগ্রজ। বঙ্গ রাখাল এক সৎ সমালোচকের উদাহরণ হয়ে নিজের সময়ের কবিতার আলোচনাতেও নিজের চিত্তকে নিয়োজিত করেছেন। গদ্য রচনায় বঙ্গ রাখাল অসংযতবাক নন। আবেগ-উচ্ছ্বসিতও নন। প্রাবন্ধিকের মন ও মননকে ধারণ করেই তিনি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে মনোযোগী। কখনো কখনো ব্যক্তিগত প্রসঙ্গকেও তিনি সুসঙ্গত সূত্রবদ্ধতার মধ্য দিয়ে প্রসঙ্গের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারঙ্গম। তার গদ্যে আছে শৃঙ্খলা। আছে ভাষার সুসংহত প্রয়োগ। মনগড়া ব্যাখ্যার বাইরে আছে যুক্তির স্তরকে সমাপ্তিতে পৌঁছে দেবার তাগিদ। সেখানে কবির অভিপ্রায়, কবির কোমলতা যেমন জড়িয়ে থাকে তেমনি প্রাবন্ধিকের অভ্রভেদী অনুভবের উত্থানও পাঠক টের পান। বঙ্গ রাখাল কবির মন ও গদ্যকারের যুক্তির দুর্লভ সমন্বয় ঘটিয়েছেন তার গদ্যে। ফলে যুক্তি ও উপলব্ধির স্বয়ংসম্পূর্ণ স্তরকে ধারণ করা তার জন্য সহজ হয়েছে। যা আমাদের সাহিত্য সমালোচনার ধারাটির উৎসমুখের দিকেও পথ নির্দেশ করবে।