ঘুম আসছে না আরিফ সাহেবের। নাকে ভেজা বাতাসের গন্ধ এসে লাগছে। চল্লিশ বছর পর এই পুরোনো বাড়িতে, পুরোনো ঝড়ের রাতে, পুরোনো সেই ভেজা গন্ধ, খুব অচেনা ঠেকছে। যেই বাড়িতে একটা সময় তিনি দু হাতে নাটাই নিয়ে দৌড়ে বেরিয়েছেন। যেই সিঁড়ির গোড়ায় রাতের বেলা চোখ বন্ধ করে ছুটতে গিয়ে হাটু কেটেছেন। যেই জানালার শার্সিতে চুড়ুই পাখির জন্য চাল চুরি করে এনে রেখে দিতেন। আজ তার সব কিছুই কেমন নতুন এবং দূরের বলে মনে হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে বরং দেশে না এলেই বোধহয় শান্তিটা রক্ষা হত। যে অতীত অচেনা হয়ে যায়, তাকে পুনরায় ধরার প্রচেষ্টা কেবল বিড়ম্বনাই সৃষ্টি করে। চারদিকের লোকজনে পরিচিত মুখও কমে এসেছে। বুড়ো বয়সে নতুন করে পরিচিতের সংখ্যা বাড়াতে আর আগ্রহ হয় না। কিন্তু সেটা না যায় প্রকাশ করা, না যায় এড়ানো। তিনি দেশে এসেছেন শুনে আজ সকালেও বেশ কিছু লোক এসে দেখা করে গিয়েছে। চেয়ারম্যান সুরুজ আলী, বাজারের মসজিদের খতীব রাইসুল সাহেব এবং তাদের দলবল।
বেশিরভাগের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ ছিল, অত্র এলাকায় আরিফ সাহেবের সাথে আলাপের যোগ্যতা কেবল তারাই রাখেন। চেয়ারম্যানের শালার ছেলেও নাকি আমেরিকায় থাকে। আরিফ সাহেবের সাথে কখনো সেই ছেলের দেখা হয়নি শুনে সুরুজ আলী যারপরনাই আশ্চার্য এবং তারও বেশি মনক্ষুণ্ণ হলেন।
-জলকুঠুরি