লেখাপড়া শিখে সবাই শহরমুখী হয়। শহরের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম ত্যাগ করে কে-ই বা পড়ে থাকতে চায় অজপাড়াগায়ে! গ্রাম থেকে বেরিয়ে মেধাবী ছেলেমেয়েরা এভাবেই হয়ে যায় শহরের মানুষ। মাটির সঙ্গে আর তাদের যোগাযোগ থাকে না। তাই গ্রামও উন্নত হয় না। দিনে দিনে গ্রামগুলো শ্রীহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি এখনও গ্রামনির্ভর। গ্রামকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এসব বোঝে। কিন্তু নিজেদের ক্ষেত্রে কাজে লাগায় না। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্ব এখন এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে, যখন গ্রাম ও শহরের ভেদরেখা অনেক অংশেই মুছে দেওয়া সম্ভব। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে যে কেউ প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উন্নত শহরের জন্যও কাজ করতে পারেন। কেউ কেউ তেমনটি করছেনও। সেরকমই একজন শিক্ষিত তরুণের স্বপ্ন ও সংগ্রামের গল্প লেখক রাহিতুল ইসলাম লিখেছেন তাঁর ‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ উপন্যাসে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শফিক। সে একটি নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাকত্তোর সম্পন্ন করেছে। বাবা–মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে পড়ালেখা শেষ করে শহরে বড় চাকরি করে তাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু শফিক ফিরে যেতে চেয়েছে গ্রামে। যে চরে যাতায়াতেরই কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই, সেখানকার মানুষদেরই গড়ে তুলতে চেয়েছেন অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তিতে দক্ষ মানুষ হিসেবে। এই কাজে শফিকের অনুপ্রেরণা তার স্কুলের এক স্যার। যিনি তার সারা জীবনের সম্বল দিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি স্কুল। শফিক তার লোভনীয় চাকরি এবং শহর ছেড়ে ভার নিতে চায় সেই স্কুলের। কিন্তু তার এই চেষ্টা কি সফল হবে? একদিকে লোভনীয় চাকরি, খ্যাতির হাতছানি, শহরের চাকচিক্য আর অন্যদিকে চরের ছেলেমেয়েদের জন্য প্রায় শুন্য থেকে কিছু শুরু করা। শফিকের বাবা, মা ও প্রেমিকা প্রত্যেকেই শফিকের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। সবার আপত্তির মুখে শফিক কি পারবে তার স্বপ্ন পূরণ করতে? না কি মাঝপথে এসে পিছু হটে যাবে? স্বপ্ন আর বাস্তবতার দ্বন্দ্বে এগিয়ে চলে এই উপন্যাস। রাহিতুল ইসলামের এটি চতুর্থ উপন্যাস। আগের উপন্যাসগুলোর মতো এতেও রয়েছে চমক, বাস্তবতা আর সাহসী মানুষের গল্প। বাস্তবতা কখনো গল্পকেও হার মানায়। এ উপন্যাস বাস্তবের সংগ্রামী মানুষের জন্য হয়ে উঠবে এক অনুপ্রেরণার দলিল। বইটি প্রকাশ করছে আদর্শ । প্রচ্ছদ করেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি।