আমাদের জাতীয় নেতা বা শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কেউই সেভাবে লেখালেখি করেননি। অন্তত অনেকদিন পর্যন্ত আমাদের তেমনই ধারণা ছিল। সত্যি কথা বলতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রকাশ সেদিক থেকে আমাদের কাছে এক বিরাট চমক হয়ে আসে। সদাব্যস্ত রাজনৈতিক জীবনের ফাঁকে দীর্ঘ কারাবন্দিত্বের দিনগুলো তিনি যে বাগান করার পাশাপাশি লেখালেখি করেও কাটিয়েছেন, তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাইরে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তা বলতে গেলে অজানাই রয়ে গিয়েছিল। যদিও অন্য যে কোনো ক্ষেত্রের গুণী বা কীর্তিমান মানুষের মতো একজন রাজনৈতিক নেতারও চিন্তা বা দর্শন বোঝার পক্ষে তাঁর বক্তৃতা-বিবৃতির চেয়ে রচনা পাঠের গুরুত্ব অনেক বেশি। উপরন্তু সে রচনা যদি হয় মুজিবের মতো একজন মানুষের, যাঁর জীবনের সঙ্গে একটি জাতির জাগরণ, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এ বছর তাঁর জন্মের শতবর্ষ পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে তাঁর জীবন ও অবদান নিয়ে ইতিমধ্যে অজস্র গ্রন্থ ও রচনা প্রকাশিত হয়েছে। আগামীতেও নিশ্চয় আরো হবে। তবে শেখ মুজিবুর রহমানকে সঠিক ও সম্যকভাবে বোঝার জন্য তাঁর নিজের লেখা তিনটি বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং আমার দেখা নয়াচীন পাঠের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের অনেক ভুল বা খণ্ডিত ধারণা ও বিভ্রান্তি অপনোদনেও যা সাহায্য করবে। বিশিষ্ট গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক মোরশেদ শফিউল হাসানের নিবিড় পাঠ ও বিশ্লেষণের ফল এ গ্রন্থটির মূল্য বা তাৎপর্য সেখানেই।