আবর্তন-বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেমন দেশে দেশে এক-একজন ক্ষণজন্মা মনীষীর জন্ম হয়, তেমনি প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে আসে নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাক মহামারি। করোনা কি তবে বিশ^বাসীর জন্য একবিংশ শতাব্দীর অযাচিত উপহার? ধনী-নির্ধন-কালো-ধলো-ছোটো-বড়ো তার আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি কেউই। এই মহামারিতে সৃষ্টির সেরাজীব মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষ প্রকৃতিকে কতটুকু ভালোবাসে আর কতটা প্রকৃতি-বিধ্বংসী অপতৎপরতায় লিপ্ত, করোনাকালে তারও একটা বোঝাপড়া চলে এসেছে। মনুষ্যকুল কতখানি মানবিক বা অমানবিক আচরণ করতে পারে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। করোনার অবকাশে জনজীবনে স্থবিরতা ও ছন্দপতন ঘটেছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় পড়েছে ছেদ; প্রাপ্তি ও প্রত্যাশায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। শিক্ষাঙ্গণ, বিপণিকেন্দ্র, অফিস-আদালত, কল-কারখানাসহ চলাচলেও এসেছে সংক্ষিপ্ততা। বিশ^ব্যাপী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে অসংখ্য নর-নারী এবং চিরতরে হারিয়ে গেছে লক্ষ প্রাণ। এরই মধ্যে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে এগিয়ে এসেছে সম্মুখসারির যোদ্ধা : স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী, সংবাদকর্মী, শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী; বিনোদন, পর্যটন, ধর্মীয় অনুশাসন ও উৎপাদনে চলছে কৃচ্ছ্রতাসাধন। পাঠাগার স্থাপন, বৃক্ষরোপণ এবং পতিত জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতি চাঙ্গাকরণ, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে নাগরিক শুদ্ধাচারে জীবন-জীবিকায় গতিময়তা আনয়ন, জাতির দুর্দিনে দুর্যোগে-দুর্ভোগে স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় যুবসমাজের অংশগ্রহণ প্রভৃতি সুনিপুণ বিন্যাসে উপস্থাপিত হয়েছে করোনাকালের কথকতা গ্রন্থে।