“থ্রিলার: স্টোরিজ টু কিপ ইউ আপ অল নাইট” বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ
এই বইটা দুটো বিষয়ের সূচনা করলাে। প্রথমত, এটি থ্রিলার ছােটোগল্পের সর্বপ্রথম সংকলন এবং দ্বিতীয়ত ইন্টারন্যাশনাল থ্রিলার রাইটারস, ইনকর্পোরেটেড এর প্রথম পেশাদারী প্রকাশনা। প্রকৃতিগতভাবে আমরা লেখকরা একা থাকতে পছন্দ করি। সুখী থাকি নিজের কাজ, পরিবার এবং কিছু কাছের বন্ধুদের নিয়ে। কিন্তু আমরা কখনােসখনাে একত্র হবার আকুল আকাক্ষাও পােষণ করি। বছরখানেক ধরে আমরা সবাই বলছিলাম, “আমরা কেন একটা সংগঠন গড়ছি না?” এরপর জুন ২০০৪, স্কটসডেল অ্যারিজোনায় অবস্থিত ঐতিহাসিক পয়জনড পেন বুকস্টোরের বারবারা পিটার, যুক্তরাজ্যে সর্বপ্রথম থ্রিলার কনফারেন্সের আয়ােজন করেন। তিনি থ্রিলার লেখা এবং প্রকাশের ওপর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আলােচনা করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ছয়জন লেখককে- লি চাইল্ড, ভিন্স ফ্লেন, স্টিভ হ্যামিলটন, গেইল লিন্ডস, ডেভিড মােরেল এবং কেথি রিচ- এবং একজন সম্পাদক, সেইন্ট মার্টিন প্রেসের কেইথ কাহলা মধ্যাহ্নভােজের সময় ক্লাইভ কাসলার বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানটা হওয়ার দুসপ্তাহ আগে, বারবারা ভেবেছিলেন তিনি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান ভাববেন যদি অন্তত একশজন মানুষ তাতে অংশ নেয়। শেষে ১২৫জন যােগ দিয়েছিল। আমরা অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে সেখানে সবাই কেবল লেখালেখি শেখার জন্য আসেনি। অনেক পাঠক এসেছিল তাদের প্রিয় লেখকদের সাথে দেখা করতে। আমরা যা অনুমান করছিলাম তার পক্ষে প্রথম শক্ত প্রমাণ পেয়েছিলাম এখানেই : সেই সাথে থ্রিলার লেখকদের সংগঠনের প্রতিও চাহিদা লক্ষ্য করেছিলাম। আমরা যদি সম্মেলন আয়ােজন করি, আমাদের মতাে পাঠকরাও তাতে খুশিমনে যােগ দেবে। আর যদি আমরা পুরস্কারের আয়ােজন করি- যেখানে ইংরেজি ভাষায় শুধু থ্রিলার বই, গল্প এবং চলচ্চিত্রের জন্য আলাদাভাবে কোনাে পুরস্কার নেই- আকর্ষণটা তখনই জন্মাবে।
সম্মেলনের শেষ দিনে, স্কটসডেলের বিল্টমাের হােটেলের রৌদ্রজ্জ্বল রেস্টুরেন্টে উপস্থিত অনেকেই কথা বলার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন। থ্রিলারের সুদক্ষ লেখিকা গেইল লিভস বললেন, এই সম্মেলন আমাদের বােঝাচ্ছে থ্রিলার লেখকদের জন্য একটা সংগঠন গড়ে তােলার সময় হয়ে গেছে। সাংবাদিক ও ফ্রিল্যান্স সম্মেলন সমন্বয়ক অ্যাদ্রিয়ান মুলার বললেন, সংগঠনটা মােটেও শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলে চলবে না। বারবারা পিটার জানালেন, তিনি আরাে বৃহৎ আকারে সম্মেলন আয়ােজন করতে আগ্রহী। গেইল যখন বুঝলেন বারবারা আয়ােজন করতে আসলেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তখন তিনি দ্রুত ঘােষণা করলেন, “আমি একা একা প্রতিষ্ঠানটা গড়তে পারবাে না।” তার অতুলনীয় স্বামী ডেনিস লিন্ডস তার সাথে যােগ করলেন, “সে ঠিক বলেছে। একা একা সে পারবে না।” বারবারা মুচকি হেসে বললেন, “ডেভিড মােরেলকে সাথে নিন। তিনি এ ব্যাপারে উপযুক্ত।”
এবং সেটাই ঘটলাে।
অ্যাদ্রিয়ান মুলার প্রত্যেক থ্রিলার লেখককে ইমেইল পাঠিয়ে দেখতে চাইলেন যে একটা সংগঠন তৈরি করার মতাে পর্যাপ্ত আগ্রহ লেখকদের মাঝে আছে কিনা। কিছুদিন পর, গেইল আর ডেভিড লম্বা সময় ধরে টেলিফোনে আলাপ করলেন তাদের কাজের পরিমাণ এবং থ্রিলার সংগঠনকে কী করে কার্যকরীভাবে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়া যায় সে সম্বন্ধে। তারা একত্রে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হলেন। ২০০৪ সালের পুরাে গ্রীষ্ম জুড়ে অ্যাদ্রিয়ান, ডেভিড ও গেইল যােগাযােগ করছিলেন টেলিফোন এবং ইমেইলের মাধ্যমে। আল নেভিস-যিনি রহস্য পাঠক ও লেখকদের বৃহৎ সম্মেলন বাউচিরকন (Bouchercon) ২০০৪ পরিচালনা করে থাকেন, তার সাথে অ্যাদ্রিয়ান যােগাযােগ করে, সেই সম্মেলনে একটা রুমের ব্যবস্থা করে ফেললেন যেখানে থ্রিলার লেখকরা একত্র হতে পারবেন। অ্যাদ্রিয়ানের ইমেইলের প্রতি সাড়া ছিল চিত্তাকর্ষক। প্রত্যেক লেখকই বলেছিলেন, সংগঠন তৈরি করা একটা চমৎকার ভাবনা। ৯ অক্টোবর মেট্রো টরােন্টো কনভেনশন সেন্টারে একটা মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। অনেক আলােচনার পরে তৈরি হলাে ইন্টারন্যাশনাল থ্রিলার রাইটারস, ইনকর্পোরেটেড। নভেম্বর ২০০৪ এ একত্র করা হলাে সদস্যদের। সাড়া ছিল অনেকটা অবিশ্বাস্য। বর্তমানে এই সংগঠনে প্রায় চার শ এর ওপরে সদস্য রয়েছে এবং যা একত্রে ১,৬০০,০০০,০০০ এর অধিক কপি বই বিক্রি করেছে।
এটা ছিল বেশ চমকপ্রদ এবং সঙ্গতভাবেই, কেননা থ্রিলারই সবচেয়ে সমৃদ্ধ সাহিত্য মেলা আয়ােজন করেছিল। সেখানে সব ছিল। লিগ্যাল থ্রিলার, স্পাই থ্রিলার, একশন-অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলার, ধর্মীয় থ্রিলার, হাই-টেক থ্রিলার, মিলিটারি থ্রিলার। নতুন নতুন বৈচিত্র আবিষ্কারের সাথে সাথে তালিকাটা কেবল বাড়ছে তাে বাড়ছেই। প্রকৃতপক্ষে, সম্প্রসারণের এই উন্মুক্ততা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বৈশিষ্ট্যগুলির একটি। কিন্তু থ্রিলারের মধ্যে যেটা বৈচিত্র আনছে সেটা হচ্ছে একটা সাধারণ পটভূমিতে এটা যে আবেগ তৈরি করছে সেটা, বিশেষত উদ্বেগ ও উল্লাস, উত্তেজনা ও ঊর্ধ্বশ্বাস, এগুলাে সবই থ্রিল তৈরি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংজ্ঞানুসারে, যদি একটি থ্রিলার থ্রিলই দিতে না পারে, তবে সেটি থ্রিলার হয়নি।
থ্রিলার লেখকরা অবশ্য, কাহিনির গতি এবং সেটি পাঠকদের মনে যে বলে আঘাত হানে সেটির জন্যও পরিচিত। সেখানে বাধাবিঘ্নময় পথে প্রতিযােগিতা করে লক্ষ্য অর্জন করতে হয়, যা অর্জিত হয় কিছু বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের পর। লক্ষ্য ব্যক্তিগত হতে পারে (স্ত্রীকে অথবা দূর সম্পর্কের কাউকে বাঁচানাের চেষ্টা করা) অথবা বৈশ্বিক (একটা বিশ্ব যুদ্ধ ঠেকানাের চেষ্টা করা) কিন্তু প্রায়ক্ষেত্রেই এটা একত্রে ঘটে। হয়তাে একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেওয়া থাকে, হয়তাে না। কিছুক্ষেত্রে ছান্দিকভাবে ক্লাইমেক্সের উদ্রেক ঘটে যেটা আবেগ আর সংঘাতের মাধ্যমে উত্তেজনার তুঙ্গে তুলে নিয়ে যায়। অন্যক্ষেত্রে সেটা শুরুই হয় দ্রুত গতিতে এবং গতি কখনই কমে না। থ্রিলার লেখকদের সেরা কাজগুলাে হচ্ছে, যথাযত গবেষণা এবং নিখুঁত বিস্তারিত বর্ণনার মাধ্যমে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে গল্পের চরিত্রগুলাে আমাদের বিশ্ব সম্বন্ধে আমাদেরকে শেখায়। যখন একজন পাঠক একটা থ্রিলার গল্প শেষ করেন, তখন তাকে কেবলমাত্র আবেগের দ্বারা তৃপ্ত করলেই হবে না, সেই সাথে আরাে ভালাে তথ্য-এবং চিত্তাকর্ষক তথ্য রাখতে হবে যার জন্য সে পরবর্তী লেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।
হেনরি জেমস একসময় লিখেছিলেন, “গল্পের বাড়িতে অনেক জানালা থাকে।” এই পর্যবেক্ষণটা থ্রিলার লেখকদের জন্যও প্রযােজ্য এবং এই কথাটা একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
এ কথা বলা বাহুল্য, এই বইয়ের প্রত্যেক লেখক তাদের গল্প ডােনেট করেছেন। শুধুমাত্র আইটিডব্লিউ এর স্বত্বাধিকারী এবং এই বইয়ের আয় সংগঠনের কাজে ব্যবহৃত হবে। এখানের থিমটা খুবই সাধারণ। প্রত্যেক লেখক তাদের মূল কাজের যেকোনাে একটা চরিত্র বা প্রটলাইন ব্যবহার করে একটা নতুন কাহিনি লিখবেন। ফলে পাঠকরা আগে থেকেই কিছুটা জানেন এবং তার সাথে নতুন কিছু জানবেন। তাে তৈরি হােন থ্রিলড হবার জন্য। এবং উপভােগ করুন অভিজ্ঞতা।