“এ টেল অভ টু সিটিজ” বইয়ের বইটি পড়ার আগে অংশ থেকে নেয়াঃ
আগেকার পৃথিবীর সঙ্গে আজকের পৃথিবীর অমিল অনেক। দুশাে বছর আগে সমাজ ছিল দোতলা। উপরে বাস করত অল্প কয়েকজন রাজা আর জমিদার, নিচে থাকত লাখাে লাখাে কোটি কোটি নির্ধনগরিব। এই গরিবদের খাটুনির শেষ ছিল না, কিন্তু পেট ভরে খেতে তারা কোনােদিন পায়নি। তাদের খাটুনির ফল উপরতলার লােকেরাই ভােগ করত চিরদিন, তারা জোর গলায় দাবি করত যে গরিবেরা তাদের দাসত্ব করবার জন্যই জনেছে, গরিবদের শাসন আর শশাষণ করবার অধিকার খােদ ঈশ্বরের কাছ থেকেই পেয়েছে তারা। আর আজ? সে-যুগের সে-অনাচারের কিছু অবশেষ এখনও অনেক দেশে রয়েছে বটে, কিন্তু দোতলা সমাজ যে একটা খারাপ জিনিস, একথা আজ সকল দেশে সবাই মানে। পেট ভরে খাবার অধিকার সকলেরই আছে, কেউ কারও দাস হয়ে থাকবে না ঈশ্বরের দুনিয়ায়, বড় শুধু তারাই—যাদের প্রাণ বড়,-এই হল নতুন যুগের নীতি। এ-নীতি না মেনে আজকের পৃথিবীতে কোনাে মানুষ বা কোনাে সমাজ একদিনও টিকতে পারে না। এই যে আমূল বদলে গেল পৃথিবীর চেহারাটা, এর মূলে কী ছিল, জান তােমরা? এর মূলে ছিল ফরাসি দেশের একটা বৃহৎ ঘটনা, যুগ-যুগান্ত মনে থাকবার মতাে একটা প্রলয় ব্যাপার। দেশের গরিবেরা অত্যাচার সয়ে সয়ে মরিয়া হয়ে উঠল, একজোট হয়ে বিদ্রোহ করে বসল রাজা, জমিদার আর ধনীদের বিরুদ্ধে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, গিলােটিনে শিরচ্ছেদ করে দেশ থেকে উপড়ে ফেলে দিল বড়দের বংশ। এই বৃহৎ ঘটনার নাম ফরাসি বিপ্লব। এরই আদর্শ আর নীতি আজ পৃথিবীটাকে ভেঙে গড়েছে, দলিত মানবের জীবনে এনেছে বাঁচবার অধিকার।
এই বিপ্লবের ইতিহাসকে কাঠামাে করে চার্লস ডিকেন্স রচনা করেছেন তাঁর অমর গ্রন্থ ‘এ টেল অভ টু সিটিজ’-দুই নগরীর গল্প’। বিপ্লবের আগে দেশের কী অবস্থা ছিল, তার ছবি রয়েছে একদিকে—ডাক্তার ম্যানেটের জুতাে সেলাই, ছেলেকে গাড়ির তলায় চাপা দিয়ে বাপের মুখের উপর মােহর ছুঁড়ে মারা—রক্তের তুলিতে আঁকা সব ছবি। আর অন্যদিকে?—বিপ্লবের পরেকার ছবি-সে-ছবির রেখায়-রেখায় ফুটে বেরােয় লেলিহান আগুনশিখা-রাজারানী অভিজাত নরনারী গাড়ি বােঝাই হয়ে চালান যায় গিলােটিনের পানে, রক্তের নদী বয়ে যায় ফরাসিদেশের শহরে শহরে। চমকদেওয়া ঘটনার সমারােহ এ-বইয়ের পাতায়-পাতায়। কিন্তু ঘটনার চমকই ‘এ টেল অভ টু সিটিজ’-এর সবখানি নয়। মানুষের মনের গােপন কোণে সন্ধানী আলাে ফেলে সেখানকার যে-ছবি পাঠকের চোখে উজ্জ্বল করে তুলেছেন ডিকেন্স, তার চমকও অসাধারণ। সিডনি কার্টন! দেশ-বিদেশের সাহিত্যে ও চরিত্রের তুলনা নেই। যাকে সবাই জানে মাতাল ভবঘুরে অকর্মা বলে, হঠাৎ তার ভিতর থেকেই একদিন দেখা দিল এক আপনহারা মহাপ্রাণ প্রেমিক; লুসির সুখের জন্য সে হাসিমুখে গিলােটিনের তলায় নিজের মাথা পেতে দিল। এইরকম হাজার চমক-দেওয়া ঘটনা রয়েছে এই গ্রন্থে। এই বই সবার পড়া উচিত; বিশেষ করে পড়া উচিত ছেলেমেয়েদের—এইজন্য যে, এদেশে দোতলা সমাজের যেসব অনাচার এখনও বজায় রয়েছে, তা দূর করবার দায়িত্ব দুদিন বাদে তাদেরই উপর বর্তাবে।