“আম আঁটির ভেঁপু”বইটির প্রথমের কিছু অংশ:
এক. কুঠির মাঠ।
মাঘ মাসের শেষ, শীত বেশ আছে। দুই পাশে ঝােপে-ঝাপে ঘেরা সরু মাটির পথ বাহিয়া নিশ্চিন্দিপুরের কয়েকজন লােক সরস্বতীপূজার বৈকালে গ্রামের বাহিরের মাঠে নীলকণ্ঠ পাখি দেখিতে যাইতেছিল।
দলের একজন বলিল—ওহে হরি, ভূষণণা গােয়ালার দরুণ কলাবাগানটা তােমরা কি ফের জমা দিয়েছো নাকি?
হরিহর সায়সূচক কিছু বলিতে গিয়া পিছন ফিরিয়া বলিল—ছেলেটা আবার কোথায় গেল? ও খােকা, খােকা-আ-আ-পথের বাঁকের আড়াল হইতে একটি ছয়-সাত বছরের ফুটফুটে সুন্দর, ছিপছিপে চেহারার ছেলে ছুটিয়া আসিয়া দলের নাগাল ধরিল। হরিহর বলিল—আবার পিছিয়ে পড়লে এরি মধ্যে; নাও এগিয়ে চলােছেলেটা বলিল—বনের মধ্যে কী গেল বাবা? বড়-বড় কান? হরিহর প্রশ্নের দিকে কোনাে মনােযােগ না দিয়া নবীন পালিতের সঙ্গে মৎস্য শিকারের পরামর্শ আঁটিতে লাগিল।।
হরিহরের ছেলে পুনরায় আগ্রহের সুরে বলিল—কী দৌড়ে গেল বাবা বনের মধ্যে? বড়-বড় কান?
হরিহর বলিল—কী জানি বাবা, তােমার কথার উত্নর দিতে আমি আর পারিনে। সেই বেরিয়ে অবধি শুরু করেচো এটা কী, ওটা কী, কী গেল বনের মধ্যে তা কী আমি দেখেছি? নাও এগিয়ে চলাে দিকি— বালক বাবার কথায় আগে-আগে চলিল। হঠাৎ এক উলুখড়ের ঝােপের দিকে আঙুল তুলিয়া চিল্কার করিতে করিতে ছুটিয়া গেল—ঐ যাচ্ছে বাবা, দ্যাখাে বাবা, ঐ গেল বাবা বড়-বড় কান, ঐ| তাহার বাবা পিছন হইতে ডাক দিয়া বলিল—উঁহু-উঁহু-উ-কাঁটা-কাঁটা-কাঁটাপরে তাড়াতাড়ি আসিয়া খপ করিয়া ছেলের হাতখানি ধরিয়া বলিল—আহ বড় বিরক্ত কল্লে দেখছি তুমি, একশােবার বারণ কচি তা তুমি কিছুতেই শুনবে না, এজন্যেই তাে আনতে চাচ্ছিলাম না। বালক উৎসাহ ও আগ্রহে উজ্জ্বল মুখ উঁচু করিয়া বাবার মুখের দিকে তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল—কী বাবা? হরিহর বলিল—কী। তা কি আমি দেখেচি? শুওর-টুওর হবে- না ও, চলাে, ঠিক রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটো-
-শুওর না বাবা, ছােট্ট যে! -পরে সে নিচু হইয়া দৃষ্ট বস্তুর মাটি হইতে উচ্চতা দেখাইতে গেল।