ভ্রান্তিবিলাস রচিত হয় ১৮৬৯ সালে, বিদ্যাসাগরের প্রথম রচনা বেতালপঞ্চবিংশতির বাইশ বছর পরে। তিনি শুধু সাহিত্যের জন্য সাহিত্য রচনা করেননি। তাঁর প্রায় সমস্ত রচনাই শিক্ষা এবং সমাজ রূপান্তরের লক্ষ্যে রচিত। সমাজ পরিমণ্ডলকে জ্ঞানচর্চার আওতায় এনে মানুষের জীবনকে মানসম্মত করার প্রয়াসে নিবেদিত ছিল তাঁর সৃজনশক্তি। সে জন্য তার বিষয়-নির্বাচন কখনও শিক্ষামূলক, কখনও উপদেশমূলক, কখনও নৈতিকবােধ উদ্রেককারী, কখনও আনন্দ-বিনােদনমূলক। . ভ্রান্তিবিলাস বিশ্বখ্যাত নাট্যকার শেক্সপীয়রের ‘কমেডি অব এররস’ নাটক অবলম্বনে রচিত। বইয়ের বিজ্ঞাপন’ শিরােনাম অংশে তিনি লিখেছেন : “কিছু দিন পূর্বে, ইংলন্ডের অদ্বিতীয় কবি শেক্সপীয়রের প্রণীত ভ্রান্তিপ্রহসন পড়িয়া আমার বােধ হইয়াছিল, এতদীয় উপাখ্যানভাগ বাঙ্গালাভাষায় সঙ্কলিত হইলে লােকের চিত্তরঞ্জন হইতে পারে। তদনুসারে ঐ প্রহসনের উপাখ্যানভাগ বাঙ্গালাভাষায় সঙ্কলিত ও ভ্রান্তিবিলাস নামে প্রচারিত হইল।’ এরপরে তিনি বলেছেন যে এই নাটকের কাব্য-অংশ শেক্সপীয়রের অন্যান্য নাটকের চেয়ে নিকৃষ্ট’, কিন্তু এর কাহিনী-অংশ কৌতুকপূর্ণ। সেজন্য তিনি এই নাটকটি বাংলাভাষায় রূপান্তরের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন পাঠককে আনন্দ দানের উদ্দেশ্যে। ব্যক্তির আনন্দ উপভােগের জায়গাটিও তার সমাজ সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে এর দ্বারা প্রতীয়মান হয়। বিনােদনের সুস্থ পরিচর্যাকে তিনি অস্বীকার করেননি। বিজ্ঞাপনের শেষ বাক্যে তিনি লিখেছেন : যদি ভ্রান্তিবিলাস পড়িয়া এক ব্যক্তিরও চিত্তে কিঞ্চিত্মাত্র প্রীতিসঞ্চার হয়, তাহা হইলেই শ্রম সফল বােধ করিব।