“আদর্শ হিন্দু হোটেল” বইয়ের ভূমিকার লেখা:
রোমান্সপ্রবণ ঔপন্যাসিকদের মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিত। “আদর্শ হিন্দু হােটেল’ (অক্টোবর, ১৯৪০) রাণাঘাটে হােটেল-পরিচালনার অতিজাগ্রত ব্যবসায়বুদ্ধির একটি সরস ও উপভােগ্য চিত্র ইহাতে আঁকা হইয়াছে। কিন্তু এই নাগরিক চাতুর্য ও কারবারি মারর্পেচ বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে লেখক যে সরল, দেবতা-ব্রাহ্মণে ভক্তিপরায়ণ, ঘন বাঁশবন ও আগাছার জঙ্গলের আড়ালে অযত্নবিকশিত বন্য কুসুমের ন্যায় মৃদুসৌরভপূর্ণ পল্লীজীবনের সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত দিয়াছেন তাহাতেই তাঁহার নিজেরও স্বাভাবিক রুচি ও পাঠকেরও সমধিক তৃপ্তি। হাজারি ঠাকুরের চরিত্রটি চিত্তাকর্ষক, কিন্তু তাহার অদৃষ্টে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে দৈবের যে প্রসাদ-পরম্পরা পুঞ্জীভূত হইয়াছে, যেরূপ একটানা সৌভাগ্যের স্রোতে, চারিদিক হইতে প্রবাহিত অনুকূল বায়ুর প্রেরণায়, তাহার জীবনতরী সাফল্যের বন্দরে ভিড়িয়াছে তাহা বাস্তব প্রতিবেশ অপেক্ষা রূপকথার সহিতই অধিক সাদৃশ্যবিশিষ্ট। উপন্যাসটি মােটের উপর রূপকথার লক্ষণান্বিত; এবং বােধ হয় আধুনিক যুগের সমস্যাক্ষুব্ধ জীবনযাত্রার বৈপরীত্য সূচনার জন্য মিষ্ট।