“হ্যামলেট” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
শেক্সপীয়র যেসব মহৎ ট্রাজেডি নাটক লিখেছেন তার মধ্যে হ্যামলেট’ উল্লেখযােগ্য। ১৬০০ থেকে ১৬০১ খ্রিস্টাদের মধ্যে নাটকটি রচিত। হ্যামলেট’ প্রথম ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে অভিনীত হয়েছিল সফলভাবে। নাটকটি প্রকাশিত হয় ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে। শেক্সপীয়রের অন্যান্য ট্রাজেডিগুলাে হলাে ‘কিলীয়র’, ‘ম্যাকবেথ’ প্রভৃতি। এগুলাে তাঁর দর্শকনন্দিত মহত্তম ট্রাজেডি।
‘হ্যামলেট’ পাঁচ অঙ্কের নাটক। পূর্ণাঙ্গ নাটক সাধারণত পাঁচ অঙ্কেরই হয়ে থাকে। প্রথম অঙ্কে পাঁচটি দৃশ্য, দ্বিতীয় অঙ্কে দুটি, তৃতীয় অঙ্কে চারটি, চতুর্থ অঙ্কে সাতটি এবং পঞ্চম অঙ্কে দৃশ্য আছে দুটি। সাহিত্যের অন্যান্য শাখা মূলত পাঠের জন্য হলেও নাটক প্রধানত অভিনয়ের জন্য। তাই এর বিশেষ কিছু গঠনবৈশিষ্ট্য রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে পার্থক্য থাকলেও নাটকে সাধারণত চারটি উপাদান থাকে। সেগুলাে হলাে ১. কাহিনি ২. চরিত্র ৩. সংলাপ ও ৪. পরিবেশ। নাটকের পাত্র-পাত্রী বা চরিত্রগুলাের সংলাপ অথবা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ভিতর দিয়ে একটি কাহিনি গড়ে ওঠে। শেক্সপীয়রের ‘হ্যামলেট’ নাটকও তার ব্যতিক্রম নয়।
প্রতিটি নাটকে এক বা একাধিক চরিত্র থাকে। হ্যামলেট’ নাটকে প্রধান অপ্রধান মিলিয়ে অনেকগুলাে চরিত্র আছে। যেমন- ডেনমার্কের রাজা ক্লডিয়াস’, পূর্বতন রাজার পুত্র এবং বর্তমান রাজার ভ্রাতুস্পুত্র হ্যামলেট’, রাজপরিবারের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ‘পপালােনিয়াস’, হ্যামলেটের বন্ধু ‘হােরেশিও’, পােলােনিয়াসের পুত্র ‘লেয়ার্টেস’, রাজসভাসদ ভােল্টিম্যান্ড, কনেলিয়াস, রােজনান্টসল, গিল্ডেনস্টের্ন, অসরিক, জনৈক ভদ্রলােক, জনৈক ধর্মযাজক, আধিকারিক মার্সেলস, বার্নার্দো, সৈনিক ফ্রান্সিসকো, পােলােনিয়াসের ভৃত্য, একদল অভিনেতা, নরওয়ের যুবরাজ, ফার্টিব্রাস, নরওয়ের একজন সেনাপতি, ইংরেজ রাজদূতগণ, ডেনমার্কের রানি এবং হ্যামলেটের মাতা গার্টুড, পােলােনিয়াসের কন্যা ওফিলিয়া, হ্যামলেটের পিতার প্রেতাত্মা ইত্যাদি।
নাটকের কাহিনি বা ঘটনা মূলত নাটকের পাত্র-পাত্রী বা চরিত্রকে নির্ভর করেই গড়ে ওঠে। চরিত্রগুলাের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভিতর দিয়ে নাটকের কাহিনি প্রকাশিত হয়। আবার চরিত্রগুলাে মুখর হয় সংলাপের ভিতর দিয়ে। বলা যায় সংলাপ নাটকের প্রাণ। শেক্সপীয়রের হ্যামলেট’ নাটক তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।