“হ্যামলেট” বইটির ‘প্রাক কথন’ অংশ থেকে নেয়াঃ
ইংল্যান্ডে রানি এলিজাবেথের রাজত্বকালে ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের পরে পেশাধারী রঙ্গমঞ্চ গড়ে উঠলে এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য হিসেবে নাটকই প্রধান হয়ে ওঠে। গ্রিস ও রােমের সঙ্গে পরিচয়ের ফলে ইংরেজি নাটক এ সময় নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। ইতালির প্রাচীন নাটকগুলাের রূপসৌন্দর্য ও অ্যারিস্টটলের নাট্যতত্ত্ব ইংরেজ নাট্যকারদের একদিকে যেমন সমাজশাসিত মানবজীবনের নিগূঢ় রহস্যমণ্ডিত ভাবনা ও জিজ্ঞাসার জগতকে পরিতৃপ্ত করেছে, তেমনই অন্যদিকে তাঁদের নাটক রচনার বিজ্ঞানবুদ্ধিকে জাগ্রত করেছে। এ সময় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ প্রাচীন গ্রিস ও রােমের সাহিত্য-দর্শন ও রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞানতত্ত্বকে রূপদান করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। যাদেরকে অভিহিত করা হতাে University Wits বা ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বােদ্ধাজন’ বলে। সাহিত্যতত্ত্ব ও নাট্যতত্ত্বালােচনায় এঁরা ছিলেন সে সময়কার বিদগ্ধজন। গ্রিক সাহিত্যের নিয়মনীতি অনুসরণ করে চলাই ছিল এঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। সে কারণে ইংল্যান্ডে এ যুগে ট্রাজেডি ও কমেডি নাটকের আবির্ভাব ঘটে- যা কিছুকাল আগেও অচিন্তনীয় ছিল। এ সময়ের প্রধান নাট্যকারদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন ক্রিস্টোফার মার্লো (১৫৬৪-১৫৯৩), জন লিলি (১৫৫০-১৬০৬), জর্জ পিল (১৫৫৮১৫৯৮), টমাস কিড (১৫৫৮-১৫৯৮), রবার্ট গ্রিন (১৫৫৮-১৫৯২), টমাস লজ (১৫৫৮-১৬২৫), টমাস ন্যাশ (১৫৬৭-১৬০১) প্রমুখ। এঁদের নাট্য রচনার আলােকে সে সময় ইংল্যান্ডের নাট্যমঞ্চের আসর জমজমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু নাট্য প্রতিভার পরিণত রূপ এঁদের কারাে মধ্যেই বিকাশ লাভ করেনি। নাটকের কাহিনি, চরিত্র, সংলাপ ও রস সৃষ্টির ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ রূপ এবং শিল্প সৃষ্টির মােহনীয় কারুকার্যের চমৎকারিত্ব ফুটেও ওঠেনি। কেউ কেউ ক্ষেত্রবিশেষে আংশিক সাফল্য পেলেও সার্বিকভাবে কোথাও কোথাও ত্রুটি ছিল। বিশেষ করে নাটকীয় শরীরের রূপ নির্মিতির ব্যাপারে অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন। এঁদের মধ্যে রবার্ট গ্রিনের নাটকে রােমান্টিক সৌন্দর্যের সুকুমার রূপ, জন লিলির নাটকে বুদ্ধিদীপ্ত বাক্-সুষমা, টমাস কিডের নাটকে ট্রাজেডির ভয়ংকর পরিবেশ, টমাস ন্যাশের নাটকে অপূর্ব চরিত্রচিত্রণ এবং ক্রিস্টোফার মার্লোর নাটকে গীতিগন্ধভরা মানবিক বেদনার বাণী-মূর্তি ফুটে উঠেছে। এঁদের সকলের এই আংশিক সাফল্যের ফসলগুলি কুড়িয়ে প্রতিভার ডালাকে পূর্ণ করে এই সময় ইংল্যান্ডের রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হলেন উইলিয়ম শেকসপীয়র (১৫৬৪-১৬১৬)। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বােদ্ধাজনে’র আকস্মিক সাফল্যে যাঁরা বিচলিত হয়েছিলেন, তাঁরাই আবার শেকস্পীয়রের আবির্ভাবে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। এমনকি শেকসপীয়রের আবির্ভাবে নিজেদের বিপদের গুরুত্ব উপলব্ধি করে রবার্ট গ্রিন তাঁর বন্ধুদের নাটক রচনা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।