এই সেই বহুশ্রুত বই যা প্রকাশিত হওয়ার তিন বছর ধরে রাহুগ্রস্ত ছিলাে; এবং নিম্ন-আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট যার পাণ্ডুলিপি পর্যন্ত ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে, স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে, অগ্রসর নগর কলকাতার এক বিচারালয়ে, বইখানা চিহ্নিত হয়েছিলাে অশ্লীল বলে, সমাজের পক্ষে অনিষ্ট সাধক বলে। কিন্তু যারা জানেন যে জীবনের ধর্মই পরিবর্তন এবং সমাজনীতিও কোনাে স্থাণু পদার্থ নয়, সুনীতির সঙ্গে সত্য ও সৌন্দর্যের অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ বিষয়ে যারা সচেতন, তারা প্রথম প্রকাশের সময় থেকেই স্বীকার করেছিলেন যে- শুধু বাংলা সাহিত্যের বিবর্তনে নয়, সমগ্র বাঙালি ও ভারতীয় মানুষের ক্রমবিকাশে ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি একটি পরম হিতকারী প্রভাব। ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’ কবি বুদ্ধদেব বসু ও ঔপন্যাসিক বুদ্ধদেব বসু দু-জনেই সমানভাবে উপস্থিত। নয়নাংশু ও মালতীর মনােবিশ্লেষণের সূক্ষ্মতা ও গভীরতা কোনাে মনস্তাত্ত্বিকের পক্ষেও ঈর্ষণীয়; দ্বিতীয়-যুদ্ধ পরবর্তী মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজের যে চিত্র এখানে আঁকা হয়েছে তার বাস্তবতা কোনাে সমাজ বিজ্ঞানী অস্বীকার করতে পারবেন না। কিন্তু বইখানার স্থায়ীতার ও গভীরতর মূল্য তার রসের আবেদনে, ভাষার সৌন্দর্যে ও কল্পনার বর্ণচ্ছটায়। হাইকোর্টের বিচারপতিরা একে অশ্লীলতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন; এই সুন্দর, সত্যবাদী ও কবিত্বময় বইখানাকে নতুন করে প্রচার করতে পেরে আমরা আনন্দিত।