“আমেরিকা (৬ সপ্তাহের ভ্রমণ কাহিনি)” ভূমিকা: আমাকে মাঝে মাঝেই অনেকে অনুরোধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে একটি ভ্রমণকাহিনী লিখতে। ব্যাপারটি আমি কখনো গুরুত্ব দিয়ে নিই নি, কারণ ভ্রমণকাহিনীর মাঝে ঘুরেফিরে নিজের কথা এসে যায় আর নিজের ব্যক্তিগত কথা দশজনের কাছে বলতে আমার ভারি সংকোচ হয়। এছাড়াও ভ্রমণকাহিনী লেখার পূর্বশর্ত হচ্ছে ভ্রমণ। আমি যেখানে আঠারো বৎসর বাস করে ফেলছি, সেটা আর যা-ই হোক ভ্রমণ নয়। আমার ধারণা ভ্রমণের একটা শুরু এবং শেস থাকার কথা।
প্রবাসজীবন শেষ করে ফিরে আসার পর অবশ্যি অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমি নিজের দেশে স্থায়ী হয়েছি এবং কিছুদিনের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে হাজির হলে সেটাকে ভ্রমণ হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। শুধু তা-ই নয়, অন্য দশজন যখন স্বল্পকালীন ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের খোলস দেখে মোহগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত হয়ে যান, আমি তখন খোলস ভেদ করে সেখানকার সত্যিকার জীবনপ্রবাহের কাছাকাছি চলে যেতে পারি। সেই দেশটি আমার কাছে এখন আর বিদেশ নয়, সেই দেশের মানুষও বিদেশি নয়- আমি তাদের বুঝতে পারি, অনুভব করতে পারি।
তাই এই গ্রীষ্মের শুরুতে ছয় সপ্তাহের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে হঠাৎ ইচ্ছে করল দেশটিকে নিয়ে লিখতে। লেখা শেষ হলে আবিষ্কার করেছি দেম নয়- লেখা হয়েছে দেশের মানুষকে নিয়ে। ভ্রমণকাহিনীতে যা থাকার কথা তার কিছু এখানে নেই, যা থাকার কথা নয় তা-ই দিয়ে পৃষ্ঠা ভরে রেখেছি!
লেখাটিতে নানা বিষয়ে অসম্পূর্ণতা থাকতে পারে, নানা ধরনের অসংগতি থাকতে পারে, তবে যে মানুষগুলির কথা বলেছি তাদের প্রতি আমার আন্তরিকতায় এতটুকু খাদ নেই। যে দেশের মানুষ আমাকে স্বদেশ এবং স্বজন থেকে বহুদূরে বুক আগলে রেখেছিল তাদের জন্যে আমার ভিতরে গভীর ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নেই।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১০ আগস্ট ১৯৯৬
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।