“রিক্তের বেদন”বইটির প্রথমের কিছু অংশ:
আঃ! একি অভাবনীয় নতুন দৃশ্য দেখলুম আজ ? …..
জননী জন্মভূমির মঙ্গলের জন্যে সে-কোন্ অদেখা-দেশের আগুনে প্রাণ আহুতি দিতে একি অগাধ অসীম উৎসাহ নিয়ে ছুটেছে তরুণ বাঙালীরা, – আমার ভাইরা ! খাকি পােশাকের স্নান আবরণে এ কোন্ আগুন-ভরা প্রাণ চাপা রয়েছে। তাদের গলায় লাখাে হাজার ফুলের মালা দোল খাচ্ছে, ওগুলাে আমাদের মায়ের-দেওয়া ভাবী বিজয়ের আশি-মাল্য—বােনের দেওয়া স্নেহ-বিজড়িত অশ্রুর গৌরবােজ্জ্বল-কৰ্মহার।
ফুলগুলাে কত আর্দ্র-সমুজ্জ্বল ! কি বেদনা-রাঙা মধুর ! ওগুলাে ত ফুল নয়, ও যে আমাদের মা-ভাই-বােনের হৃদয়ের পূততম প্রদেশ হ’তে উজাড় করে দেওয়া অশ্রুবিন্দু। এই যে অশ্রু ঝরেছে আমাদের নয়ন গলে, এর মত শ্রেষ্ঠ অশ্রু আর ঝরেনি, -ওঃ সে কত যুগ হতে ! ” আজ ক্ষান্ত-বর্ষণ প্রভাতের অরুণ কিরণ চিরে নিমিষের জন্য বৃষ্টি নেমে তাদের খাকি বসনগুলােকে আরাে গাঢ়-স্নান করে দিয়েছিল। বৃষ্টির ঐ খুব মােটা ফোঁটাগুলাে বােধ হয় আর কারুর ঝরা অশ্রু। সেগুলাে মায়ের অশ্রু! ভরা শান্ত আশীর্বাদের মত তাগিদে কেমন অভিষিক্ত করে দিল !
তারা চলে গেল ! একটা যুগবাঞ্ছিত গৌরবের সার্থকতার রুদ্ধবক্ষ-বাম্প-রথের বাষ্পরুদ্ধ ফোঁস ফোঁস শব্দ ছাপিয়ে, আশার সে কি করুণ গান দুলে দুলে ভেসে আসছিল—
“বহুদিন পরে হইব আবার আপন কুটীরবাসী | হেরিব বিরহ-বিধূর অধরে মিলন-মধুর হাসি, শুনিব বিরহ-নীরব কণ্ঠে মিলন-মুখর বাণী, —
আমার কুটীর-রাণী সে যে গাে আমার হৃদয়-রাণী।” সমস্ত প্রকৃতি তখন একটা বুকভরা স্নিগ্ধতায় ভরে উঠেছিল। বালার আকাশে বার বাতাসে সে বিদায়-ক্ষণে ত্যাগের ভাস্বর অরুণিমা মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছিল। কে বলে মাটির মায়ের প্রাণ নেই ?
| এই যে জল-ছলছল শ্যামােজ্জ্বল বিদায়-ক্ষণটুকু অতীত হয়ে গেল, কে জানে সে আবার কত যুগ বাদে এম্নি একটা সত্যিকার বিদায়-মুহূর্ত হয়ে আসবে ?
আমরা ইস্তক নাগাদ ত্যাগের মহিমা কীর্তন পঞ্চমুখে ক’রে আসছি, কিন্তু কাজে কতটুকু করতে পেরেছি ? আমাদের করার সমস্ত শক্তি বােধ হয় এই বলার মধ্য দিয়েই গলে যায়।