ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
তিরিশোত্তর কবিতার ধারায় কবি আহসান হাবীব আমাদের আদি পিতৃপুরুষ এ-কথা আজ সর্বজস্বীকৃত। বোদলেয়বীয় আধুনিকতার যে উদ্বোধন ঘটে বাংলা কবিতায় তিরিশ কবিকুলের রচনাকর্মে, এ-বাংলায় আহসান হাবীব ছাড়া তাঁর সকালের শক্তিমান কবিদের অন্য কেই এত ব্যাপকভাবে তাকে আত্মস্থ ও আলিঙ্গন করতে পারেননি।চল্লিশের দশকে আহসান হাবীব তিরিশোত্তর আধুনিকতাকে কেবল আত্মস্থ করেননি-তিরিশি কবিরা তাঁদের কাব্যতত্ত্বে নৈরাশ্যবাদ, স্বকালের বন্ধ্যাত্ব, বিমানবিকীরণ তথা জনজীবন বিচ্ছিন্নতার যেসব সীমাবদ্ধতার দেয়াল তৈরি করেছিলেন, তিনি তা ভেঙে দিয়ে আধুনিকতার সংজ্ঞা করে তুললেন সম্প্রসারিত ও মুক্ত। আহসান হাবীবোত্তর আমাদের আধুনিক কবিতা তাই এসব ইজমের দাসত্ব করেনি।আশাবাদ ও স্বদেশ-সংল-গ্নতাকে ধারণ করেও কবিতার আধুনিকতা ক্ষুণ্ন হয় না, আহসান হাবীব তাঁর রচনাকর্মের মাধ্যমেই তা আমাদের দেখিয়েছেন।কবি হিসেবে আহসান হাবীব আমাদের কাছে বরেণ্য কেবলে এই ঐতিহাসিক সত্যটুকুর জন্যই নন-তিরিশোত্তর কালে আবির্ভূত আমাদের শ্রেষ্ঠ কবিদেরও একজন তিনি।‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বলে মালাটবন্ধ এ-সংকলনের কবি-তাগুলোই আহসান হাবীব-এর শ্রেষ্ঠ কবিতা-এমন অহমিকা সংকলকদ্বয়ের নেই, কারণ কোনো কবির শ্রেষ্ঠ রচনাকর্মের নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাক্তি-নিরপেক্ষ নয়। পাঠকভেদে এর তারতম্য ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। বলা যায় আমাদের পছন্দের কিছু কবিতাকে এ-গ্রন্থে সংকলিত করতে পেরে আমরা আনন্দিত।