“রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
১৯৭৫-এর নভেম্বর নিয়ে উপসম্পাদকীয় লিখতে বসে, আমি হঠাৎই অনুভব করলাম, আমার ভিতর থেকে কী যেন উঁকি দিচ্ছে। এটি যে একটি পূর্ণগ্রহ, তা বুঝতে পারলাম সংশ্লিষ্ট সময় নিয়ে দ্বিতীয় কিস্তিটি রচনা করার সময়। বিষয়টি যখন আমার কাছে ধরা পড়লাে, তখন মনে হলাে, – হ্যা, আমার মনের ভিতরে এই গ্রন্থ রচনা করার সঙ্গোপন প্রস্তুতি তাে ছিলই। ১৯৭৫-এর নভেম্বর মাসটিকে আমি তাে আমার বুকের ভিতরে গত ২১ বছর ধরে গােপন-ক্ষতের মতােই বয়ে বেড়িয়েছি। এটি অরচিত গ্রহ নয়। এই গ্রহটি আমার ভিতরে রচিত হয়েই ছিল। তাই, ডুবে-যাওয়া জাহাজ সনাক্ত হওয়ার পর, তাকে তুলে আনার কাজ সম্পন্ন করতে আমার একটুও বেগ পেতে হয়নি। ঐ ডুবে-যাওয়া জাহাজের মধ্যে দেশবাসীর বহু প্রিয়-লাশের সঙ্গে আমার নিজের লাশটিও আটকা পড়ে ছিল। তাই, মমতা সহকারেই সময়সমুদ্রের অতলগহর থেকে, আমি ঐ জাহাজটিকে উত্তোলন করেছি, যার নাম হতে পারে : রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড়-ট্রাজেডিগুলাের সঙ্গে আমার কবিজীবন, অনতিক্রম্য ঘটনার আবর্তে কীভাবে ক্রমশ জড়িয়ে পড়েছিল, ‘রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫-এ আমি সে-কথাই ইতিহাসের আদলে বলবার চেষ্টা করেছি। এই আত্মজৈবনিক গ্রন্থটি আমার ব্যক্তিজীবনকে অতিক্রম করে, অনুসন্ধিৎসু ইতিহাস পাঠকের দাবিপূরণে যদি সক্ষম হয়, তাহলেই আমার শ্রম সার্থক বলে গণ্য করবাে। কবিতার পরিবর্তে, সময় যে আমাকে দিয়ে আমার দেশের ইতিহাস লিখিয়ে নিচ্ছে, এ এক রহস্যজনক ঘটনাই বটে।