এটা কোনো ইতিহাসের বই নয়, রাজনীতির বইও নয়। এ আমার একান্ত স্মৃতিচারণা। আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা থেকে উনিশ পঁচাত্তরের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ- এই দীর্ঘ কালপর্বে সংঘটিত ঐতিহাসিক কিছু ঘটনার সঙ্গে আমার স্বামী কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদার সূত্রে আমার জীবনও জড়িয়ে পড়েছিল। নানা সংঘাতে, টানাপোড়েনে যখন সবকিছু প্রায় ভুলতে বসেছিলাম, কিংবা মাঝেমধ্যেই স্মৃতির জাবর কাটছিলাম, তখনই প্রথম আলো-র সম্পাদক মতিউর রহমানের কাছ থেকে অনুরোধ এল, ‘লিখে ফেলুন খন্দকার নাজমুল হুদা ও আপনার জীবনযুদ্ধের কথা। বই আকারে আমরাই ছাপব।
শিল্প ও সাহিত্যের রহগ্রাহী হলেও আমি লেখক নই। লেখক হওয়ার চেষ্টা ও কল্পনাও করিনি কোনো দিন। ফলে আমার কথা আমি বলে গেছি আর অনুলেখক তারা রহমান সেটা লিখে গিয়েছেন। এই সূত্রে অনুজপ্রতিম তারাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। সম্পাদনা করার পর শেষ পর্যন্ত মুদ্রিত আকারে এ বই বের হওয়ায় আমি যারপরনাই খুশি।
সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে স্মৃতিকথা একটা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। আমার এই আত্মজৈবনিক রচনা সেই ভূমিকা পালন করবে কি না, জানি না। তবে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি আমার সেই সময়কার ঘটনার বিবরণ তুলে ধরতে।
আর একটি কথা, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র প্রকৃত নাম ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য।’ কিন্তু পাকিস্তানিরা এই নাম বিকৃত করে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ হিসেবে প্রচার করে। এখনো এ মামলার প্রসঙ্গ এলে অনেকে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ বলে থাকেন। যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ষড়যন্ত্র শব্দটি খুবই পীড়াদায়ক। কারণ, যাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁরা কেউ ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন না। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই তাঁরা কাজটি করেছিলেন।
প্রথমা প্রকাশনের কর্মীদের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও শ্রম ব্যতিরেকে এ বই বেরোনো সম্ভব ছিল না। তাঁদের সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও ধন্যবাদ জানাই।
নীলুফার হুদা
ফেব্রুয়ারি ২০১১
সূচিপত্র
* উগোকি থেকে হুদাকে গ্রেপ্তার
* কলকাতা থেকে ঢাকায় এবং বিয়ে
* উগোকিতে হঠাৎ আমার মেজো ভাশুর এলেন
* পাকিস্তান থেকে ঢাকায়
* আগরতলা মামলা শুরু হলো
* মামলা থেকে সবাই মুক্ত
* প্রতিরোধ যুদ্ধে হুদা
* হুদা মুক্তিযুদ্ধে গেলেন
* বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে হুদার নতুন কর্মজীবন
* কুমিল্লা থেকে রংপুর এবং কালো পঁচাত্তর
* আমার নতুন জীবনযুদ্ধ
* ছবি