“উড়ুক্কু” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
নীনা নামের নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির চাকুরিজীবী মেয়েটি এই পরিবেশের একজন বিচ্ছিন্ন নারী চরিত্র। বিয়ে বিচ্ছেদের পর সাবলেটে বসবাস করে এক পরিবারের সাথে। চাকরির সঙ্গে আপােষ, দুর্বিষহ জীবন, দারিদ্র, কুৎসিত মনেপীড়ন… এই সবের মধ্যে যুদ্ধ করতে করতে পরিচিত হয় একজন মহৎ ব্যক্তির সাথে । যিনি এক সময় তার মায়ের প্রেমিক ছিলেন। নীনার চিন্তার দরজা খুলে যায়, বিশাল পৃথিবীতে সে পা রাখতে শেখে। নতজানু হয় সেই ব্যক্তিত্বের কাছে। যেনাে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে মায়ের। এর মধ্যেই স্বামীর প্রবল কাঙ্খা— পুনরায় একত্রিত হওয়ার। কিন্তু সংসার চলাকালীন তার জীবনের বিক্ষিপ্ততা, সমকামী স্বামীর সাথে ঘৃণিত, হতাশ, ক্লিশিত সময় অতিবাহনের রূঢ় স্মৃতি তাকে ভীত আতঙ্কিত করে। এ সময় নিজেকে অভিযুক্ত করে ক্রমাগত দগ্ধায় সে। সদ্যজন্ম নেয়া সন্তানের জন্ডিস রােগে মৃত্যু। তার উড়ন্ত রূপ, হামাগুড়ি, হাসপাতালের সাদা ছাদ তােলপাড় করে নিরন্তর হিম চিল্কার… নীনাকে প্রতিনিয়ত নুব্জ-কাতর করে রাখে। এর মধ্যে পরিচিত হয় ওমর নামের বিদঘুটে, জঙ্গুলে এক ছেলের সঙ্গে, যার নিজের কোনাে শেকড় নেই। রাগ, ঘৃণা, আনন্দ, বেদনা কিছুই যাকে স্পর্শ করে না। সমাজের চোখে আত্মসম্মানবােধ বিবর্জিত সেই ছেলের। সহমর্মিতায় সে আচ্ছন্ন হয়। এই সব দিকচক্রবালে পাক খেতে খেতে নীনা গর্ভে একটি সন্তানের উপস্থিতি টের পায়। প্রথম সন্তানের হলুদ মৃত্যুর দুঃসহতার সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন দ্রুণকে ধ্বংস না করার আকুতি। প্রবল আত্মসংকটের মধ্য দিয়ে সমাজ বাস্তবতার সাথে, অস্তিত্বের সাথে ক্রমশ যুদ্ধের মুখােমুখি দাঁড়ায় সে।