ফ্ল্যাপে লিখা কথা
সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে আটাশ বছর একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার স্মৃতিচারণ মাত্র নয়। এটি একাথে আমাদের সেনাবাহিনীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও। সেনা জীবনের স্মৃতি- মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ও পরবর্তী ঘটনাসমূহ -নানা অভ্যুত্থানের বিষয় নিয়ে এ পর্যন্ত বেশকিছু গ্রন্থ আমাদের দেশে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে প্রত্যেকেই তাঁদের নিজস্ব অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ঘটনার উপস্থাপন, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের চেষ্টা করেছেন। সে-সব বইয়ে কোনটিরই মূল্য বা গুরুত্বকে অস্বীকার না করেও বোধ গয় বলা যায় যে, মেজর জেনারেল (অবঃ) ইব্রাহিমের এ বইটি নানা কারণেই অনন্যতার দাবিদার। যা এ বইটিকে বিশেষভাবে স্বাতন্ত্র্য চিহিৃত করেছে তা হল লেখকের বৈদগ্ধ্য, তথ্যনিষ্ঠা ও ঘটনা বর্ণনায় প্রায় ঐতিহাসিকোচিত সিরাসক্তি। স্মৃতিকথা লিখতে গিয়েও-সচরাচর যেমনটি দেখা যায়-তিনি কোথাও নিজেকে বড় করে তোলেননি বা কাউকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছোট করেননি। লেখকের মতে ‘আমরা ইতিহাসের গৌরবময় দিন বা ঘটনাবলি নিয়ে আলোচনা কম করি; বিতর্কিত দিন ও ঘটনা নিয়ে যুদ্ধ বাধাই’। লেখক নিজে সচেতনভাবে সে প্রবণতা পরিহার করেছেন। যথার্থ ঐতিহাসিক গুরুত্বের ঘটনা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। ‘কোনো প্রকার বিদ্বেষ ও মনের আনন্দ থেকে ঘটনা বর্ণনা করেন নি।
১৯৯৬ এর ১৮-২০ মে’র ঘটনাপ্রবাহ, যার ফলশ্রুতিতে তৎকালীন সেনা প্রধানসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়, লেখক নিজেও যার শিকার হন, এই বইটির মূল উপজীব্য হলেও, উক্ত ঘটনার প্রেক্ষাপট হিসেবে স্বাধীনতা পূর্বকাল থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসকে -তার তৎকালীন গঠনপর্ব ,মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় অবদান,স্বাধীনতা উত্তর সংগঠন ও কার্যক্রম, পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনা, পরবর্তী অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যূত্থান প্রচেষ্টা, সামরিক শাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমল, পার্বত্য চট্রগ্রামের সেনাবাহিনীর তৎপরতা,বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সেনাদলের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কিন্তু ধারাবাহিক ও বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।