ফ্ল্যাপে লিখা কথা
দেড়’শ জনমদিন পেরিয়ে গেল তাঁর। তিরোধানের পর সত্তর বছর। তাঁর বাস্তবতা আমাদের নয়। আমাদের প্রশ্ন, আমাদের লক্ষ্য, আমাদের সমাধান, সবের ওপরে এই সময়ের একচ্ছত্র অধিকার। সব কিছুতে অনিবার্য আঁকা তাঁর ক্ষান্তিহীন, নিরাসক্ত নিরবিকার ছাপ। তবুও সে কি তাঁকে-রবীন্দ্রনাথকে- ধূলিয়ে ঘুর্তে উড়িয়ে নিয়ে যায়? ছুঁড়ে ফেলে কোন অতীতের বাঁধা ঘাটের অবশ্যম্ভাবিতায়? নাকি এখনও তিনি পথের সাথী? চিরসখা কি?
শতবর্ পেরিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের হাতে ‘বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নেওয়া বজ্র, সোয়া’শ বছর পেরিয়েও আমাদের আত্মোপলব্ধির অবলম্বন, আত্মরক্ষার হাতিয়ার। কিন্তু আজ, দেড়’শ বছর পেরিয়ে পরিস্থিতি কী?
আমরা তাঁর দিকে ফিরে তাকাই। তাকাই নিজেদের দিকেও। বোঝার চেষ্টা করি, কতটা তাঁর পথের ধূলায় হারিয়ে যায়। কোথায় তাঁর সঙ্গী করি এখনও। আবেগের কাছে নতিস্বীকার করে নয়, যুক্তিবুদ্ধির দ্বারস্থ হয়ে, সার্ক কল্যাণবোধের ধারাবাহিকতা মেনে নিয়েও। তাঁর গানে-কবিতায়, তাঁর গল্প-উপন্যাসে, তাঁর মানব-অভ্যুদয়ের জয়গানে, তাঁর বিশ্বভারথী-শ্রীনিকেতন কমসাধনায় তাঁকে আমরা অনুবীক্ষণের নিচে ফেলে যাচাই করি। দেখি তাঁকে দূরবীক্ষণেও। দেখি কবিতা-অকবিতায়। এই লেখাগুলো তারই ফল।
সূচনা
লেখাগুলো বেশির ভাগ এক ভেতরে পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে। পাঁচটি (সূচি সংখ্যা ১, ৬, ৭, ৮, ১০) ছাপ হয়েছে দৈনিক- এর সাপ্তাহিক সাহিত্য-সাময়িকীতে, আরো পাঁচটি (সূচি ৩, ৫, ৯, ১১, ১৩) মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলমে’। ‘আফ্রিকা’ দৈনিক জনকণ্ঠের কোন এক রবীন্দ্র-সংখ্যায়। ‘গীতাঞ্জলি’ লেকা ‘ছায়ানটে’র এক অনুষ্ঠানের জন্যে; আর ‘এখন রবীন্দ্রনাথ’ পড়ি বাংলা একাডেমীতে। ‘বিশ্বভারতী’ থাকছে প্রফেসর আনিসুজ্জামান সম্পাদিত রবীন্দ্র-স্মারক গ্রন্থে। আমরা লেখা যে এঁরা গ্রহণ করেছেন, এজন্য এঁদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
রবীন্দ্রনাথের একটি বিশেষ পরিচয়, বা সারবিক পরিচয় তুলে ধরা এই লেখাগুলোর প্রাথমিক উদ্দেশ্য নয়। কোন প্রশ্ন বা প্রসঙ্গ নিয়ে প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা রচনা। তাদের ভেতরে কোন ধারাবাহিকতা বা যোগসূত্র আছে, এমন বললে বাড়িয়ে বলা হবে। তবে তাঁর সৃষ্টি প্রতিভার ও কর্সাধনার বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি ধারণা পাবার চেষ্টা করেছি। তা ঠিক, কি বেঠিক, সে বিচার পাঠকদের হাতে। শুধু এটুকু বলি, এই সময়ের পেক্সাপটে এখানে আমার রবীন্দ্রনাথকে বোঝার চেষ্টা। আমরা পুরোটা কখনো দেখিনা। দেখতে পাই না। প্রতিটি সময়ের বাস্তবতা যেমন যেমন দেখায়, তেমন তেমন দেখি। তারপরেও কতটুকু দেখি, তা নিরভর করে যে দেখে, তার যোগ্যতার ওপর। ভুলভ্রান্তিও থাকতে পারে। এই বইতেও। সেগুলো ধরিয়ে দেবার অধিকার যাঁরা পড়বেন, তাঁদের।
রবীন্দ্র প্রতিভার বহুদিক এখানে আলোচনায় আসেনি। যা এসেছে, তার খাপছাড়া। তারপরেও হাতে কিছু জমা পড়লো কি না, এইটুকু দেখবার। যেহেতু একটা বইতে সাজাবার উদ্দেশ্য নিয়ে লেখাগুলো তৈরি নয়- তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও স্বয়ংসম্পূর্- তাই একই কথা বা যুক্তিক্রমের পুনরাবৃত্তি ভিন্নভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু ঘটেছে। এখন কাটছাঁট করতে গেলে নিজ নিজ জায়গায় প্রবন্ধগুলো দুরবল হয়ে পড়তে পারে। তাই কোন পরিবতন আর করিনি। পাঠকের বিরক্তি যদি এতে বাড়ে, তবে তার জন্যে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
শোভা প্রকাশ আবার আমার বই ছাপছেন। তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের কাছে। বই-এর প্রচ্ছদ রচনা করেছেন ধ্রুব এষ। তাঁকেও আন্তরিক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ যাঁরা শব্দবিন্যাসে-মুদ্রণে সহযোগিতা করেছেন এবং কষ্ট করে প্রুফ দেখেছেন, তাঁদেরও।
তারপরেও ভুলত্রুটি যদি কিছু থেকে যায়, তবে তার দায় আমার। অনুগ্রহ করে সেজন্য আমাকে মার্না করবেন।
সনৎকুমার সাহা
বিহাস
রাজশাহী
সূচিপত্র
* সুখ নয় সে, দুঃখ সে নয়
* গীতাঞ্জলি
* জাতীয়তাবাদ, জাতীয় সংগীত, রবীন্দ্রনাথ
* আফ্রিকা
* কবিতা-অকবিতা
* নারীর কথা : গল্পে-উপন্যাসে
* নয়নে লাগিল আঁধি : চোখের বালির মূল্যবিচার
* নৌকাডুবি : নিন্দা-প্রশংসার ছায়াপত্র
* আত্মপরিচয়ের অন্বেষণ : গোরা ও কিম্
* চন্দরা ও সীতা
* ‘স্ত্রীর পত্রে’র মৃণাল
* বিশ্বভারতী
* শ্রীনিকেতন-করমসাধনা
* এখন রবীন্দ্রনাথ