বাংলা কবিতার ইতিহাসে আল মাহমুদের একজন রাজপুরুষের নাম। শুধু কবিতায় কেন— গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ— সাহিত্যের সব শাখায়ই আল মাহমুদ সদম্ভে বিচরণ করেন। সত্যিকারের বাংলা উপন্যাস বলতে যদি কিছু বোঝায় তবে তার নিদর্শন আল মাহমুদের উপন্যাসে ভালোভাবেই পাওয়া যাবে। তার উপন্যাসের প্লট, চরিত্র সবই এভূভণ্ডের। তর চরিত্র সৃষ্টির ক্ষমতা, উপলব্ধির গভীরতা প্রভৃতি পাঠককে চমৎকৃত করে। বিবি মরিয়মের উইল উপন্যাসটি পড়েও পাঠক চমৎকৃত হবেন।
লেখক পরিচিতিঃ
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই তিতাস-এর পলি বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে আল মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ। একুশ বছর বয়স পর্যন্ত এ শহরে এবং কুমিল্লা জেলার সাধনা হাই স্কুলে ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। এ সময়েই ঢাকা ও কলকাতার বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে তার কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে।
বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত হলে সমসাময়িক কবিমহলে তাঁকে নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তর (১৯৬৩)। লোক লোকান্তর ও কালের কলস— মাত্র এ দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন। সোনালি কাবিন (১৯৭৩) তাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছায়। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখার দিকে মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোট গল্পগ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস কবি ও কোলাহল। বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রেও আল মাহমুদ মৌলিকতার দাবিদার। তার উপমহাদেশ, কাবিলের বোন বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর অন্যতম।
আল মাহমুদ সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি দৈনিক গণকন্ঠ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সাহিত্যপ্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি একুশে পদকসহ বেশ কিছু সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার ও জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরস্কার অন্যতম। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যার জনক। মরহুমা সৈয়দা নাদিরা বেগম তার স্ত্রী।