ফ্ল্যাপে লিখা কথা
বারটি গল্প নিয়ে সিদ্ধান্ত-র অবয়ব, পরিমিতই বলা যায়; কিন্তু এর দুই মলাটের ভেতর জীবনের যে মিছিল চলে, তার পরিসর মোটেও পরিমিত নয়। মধ্যবিত্ত জীবনের- প্রধানত নাগরিক মধ্যবিত্ত এবং আরও বিশেষ করে বললে নারীর- প্রতিদিনের পূর্ণতা-অপূর্ণতার, ইচ্ছা-বাসনার এবং প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সূক্ষ্ম এবং সংবেদী চিত্র রয়েছে প্রতিটি গল্পে। গল্পকার মালেকা পারভীন নারীর চোখেই দেখেন বিশ্বটাকে, কিন্তু তাঁর দৃষ্টিতে শুধু নারীর মনস্তত্ব, প্রকাশ-অপ্রকাশের দ্বন্দ্ব অথবা তাদের ওপর সেঁটে থাকা পুরুষ-দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় সমাজের নানা বৈপরীত্য, অসঙ্গতি এবং কপটতার জায়গাগুলোতে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিচলনগুলোকে, তার মেকিত্ব এবং নির্দয়তার বিষয়গুলোকে তিনি তদন্ত করেন, প্রশ্নবিদ্ধ করেন। মালেকা পারভীনের নারীরা বাংলাদেশের জেগে ওঠা, আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠা সমাজের সেই নাতিবৃহৎ অংশটির প্রতিনিধ, যারা ঘরে বাইরে অরক্ষিত এবং বিপন্ন। এই বিপন্নতা আরও বাড়ে যখন তাদের নায্য অধিকারগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়, অস্বীকার করা হয়। কিন্তু তাঁর নারীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকে না। ‘স্বপ্ন-নাস্তি’ অথবা ‘সিদ্ধান্ত’-র নারীদের মতো তারাও জানিয়ে দেয়, তাদের প্রত্যয়ী সিদ্ধান্তগুলো।
সিদ্ধান্ত-র বারটি গল্প নারীর অভিজ্ঞতাকেই প্রাধান্য দেয়। এসব গল্পের বিষয়বস্তু উঠে আসে বাস্তব পৃথিবী থেকে। এগুলোর একিটও আজগুবি নয়, কষ্টকল্পিত নয়। অনেক গল্পে অবাস্তব আছে, স্বপ্নের একটা ভূমিকা আছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবেরই একটি প্রতিফলন, অথবা এর সম্প্রসারণ। সাহিত্যে নারী-ভাষা বলে একটি ভাষা আছে, যার ভেতরটা স্থিতিস্থাপক, বর্ণনার কারুকাজ অন্তরঙ্গ এবং চরিত্রায়নের বর্ণনায় ভেতর-দৃষ্টিটা মুখ্য। মালেকা পারভীন সবগুলো গল্পে সেরকম এক বিশিষ্ট ভাষা ব্যবহার করেছেন। তাঁর চরিত্রায়ন জীবন্ত, বর্ণনার শক্তি ঈর্ষণীয় এবং গল্প বলার ক্ষমতাটি বলিষ্ঠ।
সিদ্ধান্ত, আমি নিশ্চিত অনেক পাঠকের অনেক সিদ্ধান্তে পৌছুতে একটি ভূমিকা রাখবে।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম